জমি না নেওয়ার ঘোষিত নীতিতে অনড় থাকায় গত সাড়ে তিন বছরে কোনও বড় শিল্পোদ্যোগীকে রাজ্যে আনতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ভূমি সংস্কার আইনে জমির ঊর্ধ্বসীমা বিষয়ক ১৪ওয়াই ধারাটির সংশোধন করে ছাড়ের আওতায় আরও বিষয়কে আনা হল। কিন্তু এর ফলে রাজ্যের ভাবমূর্তি কি বদলাবে? এই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বলেছেন, সরকার ধারাটি তুলে দিচ্ছে না কেন? তাঁদের আরও দাবি, সরকার জমি-নীতি স্পষ্ট করুক, না হলে রাজ্যে বিনিয়োগ আসবে না।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সিলিং ব্যবস্থা বহাল রেখে কিছু শিল্প ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে অতিরিক্ত জমি রাখার ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য ভূমি দফতরের এক কর্তা বলেন, “আগে ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ওয়াই ধারা মেনে শুধুমাত্র মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়ার্কশপ এবং শিল্পতালুকের জন্য এই ছাড় দেওয়া হতো। ধাপে ধাপে প্রায় সব ধরনের শিল্পকেই সিলিং-বহির্ভূতজমি রাখায় তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে।”
সংশোধনী নিয়ে সরকারের এক কর্তা জানান, আর দেড় বছর বাদে বিধানসভা ভোট। এখন কিছুটা হলেও লগ্নি টানতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্যই এই সব ছাড় দিয়ে শিল্পমহলকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। কারণ, জমি-নীতি থেকে সিন্ডিকেট রাজ, সব কিছু নিয়েই তাঁরা ক্ষুব্ধ।
বিধানসভায় এ দিন এই আলোচনায় বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, বাড়তি জমি রাখার সময়সীমা আরও দু’বছর বাড়ানো হচ্ছে কেন? তার মানে কি বাড়তি জমি রাখার ছাড়পত্র দেওয়ার পরেও শিল্প আসছে না? তাঁর বক্তব্য, সিলিং-অতিরিক্ত জমির ছাড়পত্র দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সাব-লিজ করার ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। তিনি স্পষ্ট জমি-নীতি দাবি করেন।
কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, বাম আমলে সরকার জমি নিয়ে রাজ্যটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার যা বলছে, তা-ও আবার শিল্পায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) বলেন, কল-কারখানা হলে শিল্পমন্ত্রীকে শিক্ষামন্ত্রী হতে হতো না।
জবাবি বক্তৃতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, জোর করে জমি অধিগ্রহণ না করাই এই সরকারের নীতি। এই সংশোধনী আসলে শিল্পসংস্থাগুলিকে সহায়তার জন্যই আনা হয়েছে। সরকার এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে। আর এ ভাবেই রাজ্যে শিল্প আসবে।