নতুন ভোটার, গ্রাম নিয়েও সতর্কতা জারি মুকুল-মমতার

উপরে উপরে অরাজনৈতিক প্রতিবাদের ছড়াছড়ি। বিনোদন জগতের প্রাধান্য। সংসদে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েও চপলতার কারবার! কিন্তু তলায় তলায় গভীর রাজনৈতিক উদ্বেগ। এমনই বৈপরীত্য এখন শাসক দলের অন্দরে। গ্রামগঞ্জে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম এবং নতুন ভোটারদের মানসিকতা এই দুই বিষয় এখন চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। শাসক দলের নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, এখন থেকেই উদ্বেগ ঘোচানোর রাস্তা বার করতে না পারলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কপালে দুঃখ আছে!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৩
Share:

উপরে উপরে অরাজনৈতিক প্রতিবাদের ছড়াছড়ি। বিনোদন জগতের প্রাধান্য। সংসদে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েও চপলতার কারবার! কিন্তু তলায় তলায় গভীর রাজনৈতিক উদ্বেগ। এমনই বৈপরীত্য এখন শাসক দলের অন্দরে।

Advertisement

গ্রামগঞ্জে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম এবং নতুন ভোটারদের মানসিকতা এই দুই বিষয় এখন চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। শাসক দলের নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, এখন থেকেই উদ্বেগ ঘোচানোর রাস্তা বার করতে না পারলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কপালে দুঃখ আছে! তাই পঞ্চায়েত নিয়ে আসরে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক, দুই স্তরেই। পঞ্চায়েতের কাজের সার্বিক পর্যালোচনার জন্য উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করে দু’টি বৈঠক ডাকতে চলেছেন তিনি। আর নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি দলের সর্ব স্তরের নেতারা যাতে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, জেলায় জেলায় ঘুরে সেই সতর্কতা জারি করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর সাফ কথা, “নতুন ভোটারদের তালিকায় নাম তোলাতে সহায়তা করে তাঁদের কাছে পৌঁছতেই হবে। দলের সমর্থন বাড়াতে হবে। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সকলে বিষয়টাকে সেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না!”

কিন্তু তৃণমূলের প্রকাশ্য কর্মসূচিতে এই সিরিয়াস প্রচেষ্টার কোনও ছাপ এখনও নেই! তা হলে কি জেলায় জেলায় নেতা-কর্মীদের কাছে মমতা-মুুকুলের বার্তা আদৌ কার্যকর হবে? বস্তুত, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও এর কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। দলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “কোথায় কী হচ্ছে, সব খবর দলনেত্রী রাখেন। হতে পারে, উদ্বেগের জায়গাটা জনসমক্ষে সে ভাবে দেখাতে চাইছেন না দলনেত্রী। তিনি চাইছেন দলের ভিতরে কর্মীরা প্রয়োজনীয় কাজটা করে ফেলুন।” সেই কারণেই কর্মী সম্মেলনে মমতা-মুকুলের পঞ্চায়েত এবং নতুন ভোটার নিয়ে বার্তা।

Advertisement

জেলা সফরে বেরিয়ে কিছু জেলার পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে দলীয় স্তরে বৈঠক করেছেন মমতা। আসানসোল এবং দুর্গাপুরে এসে যেমন তিনি কথা বলেছেন বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, এমমকী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সঙ্গেও। বর্ধমান, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের নেতৃত্বকে প্রাথমিক ভাবে সতর্কও করেছেন তিনি। রাজ্যের অধিকাংশ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাতে এসেছে মাত্রই ১৩ মাস আগে। এর মধ্যেই কিছু জেলায় দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ নিয়ে দলের মধ্যে থেকেই যা অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী পাচ্ছেন, তাতে তিনি বুঝছেন এখন থেকে রাশ না ধরলে বিপদ। তাই পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কর্মী সম্মেলনেই বলেছেন, “দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ নিয়ে পঞ্চায়েতের দু’টো পর্যালোচনা বৈঠক করব। সুব্রতদা, এটা আপনি দেখুন।” একই সঙ্গে মমতা বুুঝতে পারছেন, ১০০ দিনের কাজের মজুরি বকেয়া থাকা নিয়েও গ্রামেগঞ্জে তাঁর সরকার ও দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছে। তাই ১০০ দিনের প্রকল্প ছাঁটাইয়ের জন্য নরেন্দ্র মোদীর সরকারের দিকে তোপ ঘুরিয়ে দিয়ে আপাততত পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছেন।

দলের প্রতি তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ, “ব্লকে ব্লকে মিছিল করুন। হাঁড়ি-কড়াই নিয়ে নামুন!”

আগামী বছরে রাজ্যের ৯০টিরও বেশি পুরসভায় ভোট। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই সময় পঞ্চায়েত নিয়ে চিন্তা কেন? আসলে মমতা বিলক্ষণ জানেন, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার বাষ্প শহরে চিরকালই বেশি জমে। তাঁর সরকারও শহুরে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, সেখানে দৃশ্যমানতা বাড়ছে বিজেপি-র। এই অবস্থায় গ্রাম দিয়েই বাঁচতে হবে রাজ্য সরকারকে। যে ভাবে গ্রাম দিয়েই বছরের পর বছর শহরের অনীহাকে অতিক্রম করে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল বামেরা। পঞ্চায়েতে প্রায় সব জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ক্ষোভ জন্মানো মানে বিপদ বুঝেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন মমতা। আবার বিপুল সংখ্যায় যে নবীন ভোটার উঠে আসছেন, শুধু ৩৪ বছরের কাসুন্দি ঘেঁটে তাঁদের মন পাওয়া মুশকিল। তাই ভোটার তালিকায় মন দিতে দলকে লাগাতার সতর্ক করে চলেছেন মুকুল। বলছেন, “আমার কথাগুলো শুনতে নীরস লাগবে। কিন্তু সংগঠনের জন্য এগুলো শুনতেই হবে।”

দলের কর্মীদের নতুন সমর্থন জোগাড়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য মুকুল বেছে নিচ্ছেন এমন কিছু জেলার উদাহরণ, যেখানে বিরোধীদের কাজকর্মে শাসক দলের বিশেষ চাপে থাকার ব্যাপার নেই। যেমন, পুুরুলিয়া। মুকুলের বক্তব্য, সেখানে ১৭৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩১, পঞ্চায়েত সমিতি ২০টির মধ্যে ১৬, জেলা পরিষদে ২০টি আসনের মধ্যে ১৬ এবং ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টি তৃণমূলের দখলে। তা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক জয়ের লিড যা হওয়া উচিত ছিল, হয়নি। এখান থেকেই বিপদ-বার্তা পড়ে নিতে বলছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্মীরা পড়ছেন কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement