সাততাড়াতাড়ি বদলে গেল অভিজিৎ চক্রবর্তীর বাড়ির নামফলক। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি হয়তো বদলে যায় কখনও-সখনও। তাঁর ক্ষেত্রে বদলে গেল বাড়ির নামফলক। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে!
সোমবার সকালেও বাড়ির নামফলকে তিনি ছিলেন উপাচার্য। আর সন্ধ্যায় তার আগে জুড়ে গিয়েছে ‘প্রাক্তন’ শব্দটা। তিনি অভিজিৎ চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় যাঁর পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশের কথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সল্টলেকের সিই-৫৮ ঠিকানায় ঘিয়ে-বাদামি রঙের তেতলা বাড়িটা গত কয়েক মাসে সংবাদমাধ্যমের কাছে হয়ে উঠেছিল একটা ‘বিট’। যাদবপুর ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছে। তার প্রতিক্রিয়া ওই বাড়ি আর তার মালিকের উপরে কেমন পড়ছে, তা জানতে নিত্যদিনই সেখানে হামলে পড়তেন সাংবাদিকেরা। কখনও-সখনও বাড়ির মালিক ধরা দিতেন। বেশির ভাগ দিনই দিতেন না।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শোনা মাত্রই সাংবাদিকেরা এ দিন ফের জড়ো হয়েছিলেন ওই বাড়ির সামনে। তখনই চোখে পড়ে নামফলকে উপাচার্যের নামের আগে সদ্য জুড়ে যাওয়া ‘প্রাক্তন’ শব্দটা। তবে এত দিন ধরে বাড়ির সামনে দু’জন পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকতেন। এ দিনও সেই পুলিশকর্মীরা ছিলেন। ছিল বাড়ির গ্যারাজের সামনে পুলিশের রেখে যাওয়া ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ডটা।
অভিজিৎবাবু বাড়ি আছেন?
প্রশ্ন ছুড়ে বাড়ির গেটে হাত দিতেই হাঁ-হাঁ করে উঠলেন দুই পুলিশকর্মী। বললেন, “ভিতরে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্যারের নিষেধ আছে। ফোনে ধরে নিন।”
অভিজিৎবাবুর দু’টি মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে যান্ত্রিক স্বর জানাল, দু’টি মোবাইল ফোনই বন্ধ! অগত্যা বাড়ির ভিতরকার হাল জানতে এ-দিক সে-দিক উঁকিঝুঁকি। বাড়ির একতলা ও তেতলায় নিকষ অন্ধকার। বাড়ির এক দিকের বারান্দায় নীলচে আলো জ্বলছে। খোলা জানলা দিয়ে ভিতরের সাদা আলোও বোঝা যাচ্ছে। ভিতরে মানুষজনের চলাফেরাও মালুম হচ্ছে।
রাত পৌনে ৮টা। বাড়ির সামনে একটা অটো এসে থামল। তা দেখেই তৎপরতা বাড়ল সাংবাদিকদের। অভিজিৎবাবু নাকি?
প্রশ্ন শুনে একটু হাসলেন অটোচালক। দেখা গেল, বালতি-বোঝাই খাবার নামছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেগুলি অভিজিৎবাবুর পোষ্যদের। খাবার বাড়ির ভিতরে যেতেই ভেসে এল ‘ঘেউ-ঘেউ’, ‘ম্যাও-ম্যাও’।
ইতিমধ্যেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন পথচলতি কয়েক জন। কেউ কেউ জানতে চাইলেন, “ব্যাপারটা কী?” কেউ বা বললেন, “আগেই পদত্যাগ করলে ভাল করতেন।”
কিছু ক্ষণের মধ্যেই অভিজিৎবাবুর বাড়ির দরজা ফের খুলে গেল। এক মহিলা বেরিয়ে এলেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বললেন, “এখানে নাটক হচ্ছে!” তার পরেই দমাস শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। ফের তেতলা বাড়ি জুড়ে নৈঃশব্দ্য!
স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা অবশ্য দাবি করেছেন, বিকেলেই তাঁরা ‘প্রাক্তন উপাচার্য’ লেখা নামফলক দেখেছেন। যার ফলে জল্পনা উস্কে উঠেছে, তা হলে কি উপাচার্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলেন?
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, উপাচার্য পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু শিক্ষাজগতের অনেকেই জানান, পদত্যাগ গৃহীত না-হলে অভিজিৎবাবু ‘প্রাক্তন’ শব্দটা লিখতে পারতেন না। জল্পনা শুরু হয়েছে, অভিজিৎবাবু কি তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার আগেই আচার্য-রাজ্যপালের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র দিয়ে এসেছিলেন?
এ দিন অবশ্য অভিজিৎবাবুর উত্তর মেলেনি। তবে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ এক পুলিশকর্মী একটি চিরকুট এনে দেন সাংবাদিকদের হাতে। তাতে অভিজিৎবাবু লিখেছেন, “দয়া করে আজ বিরক্ত করবেন না। আমি আগামী কাল (মঙ্গলবার) সাংবাদিক বৈঠক করব। সম্ভাব্য স্থান, কলকাতা প্রেস ক্লাব। আমার অফিস থেকে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।”
কোন অফিস?
জবাব মেলেনি।