তাঁর এক ঘনিষ্ঠ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন, তার জবাবদিহি চাইতে থানার গেট ধরে ঝাঁকিয়ে তুলকালাম বাধিয়েছিলেন। এ বার খুনে অভিযুক্ত দলেরই এক নেতার গ্রেফতারি রুখতে প্রয়োজনে ওই নেতার বাড়ির সামনে ‘ক্যাম্প’ করে বসে থাকবেন বলে জানিয়ে দিলেন ভাঙড়ের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম।
যে নেতার গ্রেফতারি ঠেকাতে পুলিশের উদ্দেশে আরাবুলের এই শাসানি, সেই ভাঙড় ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি জাহাঙ্গির খান চৌধুরী ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজ্জাক সর্দারকে খুনে মূল অভিযুক্ত। স্থানীয় রাজনীতিতে নিহত রাজ্জাক আরাবুলের বিরোধী গোষ্ঠীর এবং জাহাঙ্গির আরাবুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্জাককে গুলি করে, কুপিয়ে খুন করা হয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই কাণ্ড বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করেছিল পুলিশ। রাজ্জাকের পরিবারের তরফেও তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন জাহাঙ্গির। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তাঁকে ধরতে চন্দনেশ্বরের বাড়িতে যায়। পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান পরিবারের সদস্য এবং গ্রামের কিছু মানুষ। সুযোগ পেয়ে সরে পড়েন জাহাঙ্গির। খালি হাতে ফিরতে হয় পুলিশকে।
পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বুধবার ভাঙড় ১ ব্লকের চন্দনেশ্বর বাজারে সভা করেন ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল। তিনি বলেন, “পুলিশ টাকা খেয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে জাহাঙ্গিরকে। ওঁকে কোনও ভাবে ধরা যাবে না। আমি নিজে রক্ত দিয়ে গ্রেফতারি রুখব! পুলিশ ওঁকে ধরতে গেলে প্রয়োজনে জাহাঙ্গিরের বাড়ির সামনে ক্যাম্প করে বসে থাকব।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য বলেন, “তদন্ত চলছে। পুলিশ আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করবে।” যদিও পুলিশের নিচুতলার প্রশ্ন, আরাবুলের মতো শাসক দলের দাপুটে নেতা এ ভাবে অভিযুক্তের পাশে দাঁড়ালে পুলিশ কী ভাবে কাজ করবে?
এই প্রসঙ্গেই তাঁরা তুলে আনছেন সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রসঙ্গ।
মাস খানেক আগেই বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল বীরভূম জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষের বিরুদ্ধে। সিউড়ি আদালতে তাঁর আগাম জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরেও দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ সেই নেতাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে দেখা গেলেও পুলিশের খাতায় সুদীপ্ত এখনও ফেরার। উল্টে, ওই প্রহৃত পুলিশ কর্মীকেই অন্য থানায় বদলি করে দেওয়া হয়। জনসভায় দাঁড়িয়ে পুলিশকে বোমা মারতে প্ররোচিত করার অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রত বিরুদ্ধেও। অধরা তিনিও। মঞ্চ থেকে নিজের মুখে তিন জনকে খুনের কথা স্বীকার করেও পুলিশ লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারেনি। নদিয়ায় একাধিক সভায় উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাতেও নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। হাইকোর্টের চাপে অবশ্য তাপসের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ।
এর আগেও ভাঙড় কলেজের এক শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মেরে, হুমকি দিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন ভাঙড়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল। প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলার ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছেন। কিছু দিন আগেই ভাঙড় ২ ব্লকের কাশীপুর থানায় গিয়ে হম্বিতম্বি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূল কর্মী সামাদ মোল্লাকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করেছে, সেই প্রশ্ন তুলে থানার গেট ধরা ঝাঁকান তিনি। ভাঙড় ১ ব্লকের তৃণমূল নেতা কাইজার মোল্লা বলেন, “আরাবুল ভাঙড় ২ ব্লকের নেতা। এখানে অশান্তি পাকাতে চান। অপরাধীদের আড়াল করতে চান। তবে আইন আইনের পথেই চলবে।”