কালো শালে মুখ ঢেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব জবাব দিয়েছিলেন, যা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ধন্দে পড়ে যান তদন্তকারীরা। সেই ধন্দ কাটাতে তাঁকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করতে বলা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় পার করে, শুক্রবার প্রতিনিধি মারফত ইডি-র দফতরে সেই তথ্য জমা দিলেন তৃণমূল নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা।
কিন্তু সেই সব তথ্যও যথেষ্ট নয় বলেই ইডি সূত্রের খবর। তাই শঙ্কুর কাছে ফের তথ্য চাইতে চলেছে ইডি। প্রয়োজনে তাঁকে আবার তলব করার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। তবে ঠিক কবে শঙ্কুকে ফের ডাকা হবে, এখনও তা স্পষ্ট করে জানাননি তদন্তকারীরা।
ইডি-র অভিযোগ, শঙ্কুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সারদা থেকে প্রতি মাসে প্রচুর টাকা ঢুকেছে। ঘটনাচক্রে শঙ্কু প্রথমে সারদার ‘চ্যানেল ১০’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের চালু না-হওয়া সংবাদ চ্যানেল ‘এখন সময়’-এ (পরে যার মালিক হয় সারদা) তিনি ‘ইনপুট এডিটর’ হিসেবে নিযুক্ত হন। ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুভাপ্রসন্নের চ্যানেলে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন শঙ্কু। ওই চ্যানেলেরই দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী, বর্তমানে সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। সারদা নিয়ে তাঁকেও ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোটা বেতন তো নিয়েছেনই। তা ছাড়াও সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে আরও টাকা পেয়েছেন শঙ্কু। কোন খাতে ওই টাকা নেওয়া হয়েছে, তা জানতেই শঙ্কুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
শঙ্কুর কলকাতার বাসস্থান এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য জিজ্ঞাসাবাদের পরেও স্পষ্ট হয়নি বলে জানিয়েছে ইডি। তাই সংশ্লিষ্ট সব প্রশ্নের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল শঙ্কুকে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্য সেই সব তথ্য পেশ করতে পারেননি তিনি। তথ্য চাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ বাদে, শুক্রবার ইডি-র দফতরে প্রতিনিধির মাধ্যমে কিছু নথি পাঠান শঙ্কু। ইডি সূত্রের খবর, শঙ্কুর এ দিনের পাঠানো সেই সব তথ্য প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও ধোঁয়াশা কাটেনি। শঙ্কুর দেওয়া যাবতীয় তথ্য পুনরায় যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে আরও কিছু তথ্য চাওয়া হবে তাঁর কাছে। তাতেও তদন্তকারীরা যদি সন্তুষ্ট হতে না-পারেন, সে-ক্ষেত্রে শঙ্কুকে আবার তলব করা হতে পারে।
সারদার পাশাপাশি ওড়িশার সি-শোর নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত নেমে ইডি শুক্রবার ৮৪ কোটি টাকার সম্পত্তি ‘অ্যাটাচ’ বা আটক করেছে। এই নিয়ে ওই সংস্থার মোট ১৫৮ কোটি টাকার সম্পত্তি আটক করা হল বলে জানিয়েছে ইডি। এর মধ্যে একটি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকাও রয়েছে। একই সঙ্গে ভুবনেশ্বরের একটি কারিগরি বিদ্যালয়ের ন’কোটি টাকার সম্পত্তিও অ্যাটাচ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তদন্তকারীরা জানান, আপাতত প্রশাসক বসিয়ে ওই কারিগরি বিদ্যালয় চালু রাখা হতে পারে। ইডি সিকিমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি রাজ্য থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৭ কোটি টাকার সম্পত্তি এ দিন অ্যাটাচ করা হয়। তার মধ্যে কলকাতার উপকণ্ঠে সোনারপুরের চার কোটি টাকার একটি জমিও রয়েছে।