ছ’দিনের ভারত সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে স্থলসীমা ও তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে। নয়াদিল্লি এবং ঢাকা উভয়েই এ দুটি দ্রুত সম্পন্ন করতে চাইছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া বিষয়গুলি মিটিয়ে ঢাকা সফরে যেতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের কাছ থেকে দাবি আদায় নিয়ে যথেষ্ট রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরেও।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝানোর চেষ্টা করবেন আব্দুল হামিদ। ভারতের মতো বাংলাদেশেও রাষ্ট্রপতি শুধুই নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। কিন্তু বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তাঁর এই সফরটি বাড়তি তাৎপর্য পেয়ে যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর সার্ক-এর একাধিক দেশে সফর করলেও বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি তাঁর। তবে শপথ নিয়েই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে তিনি ঢাকায় পাঠিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন, মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ নীতিই মেনে চলবে তাঁর সরকার।
তিস্তা ছাড়া অন্য যে চুক্তিটি বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া রয়েছে, তা স্থলসীমান্ত চুক্তি। সরকারের প্রয়াসে চুক্তিটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। অসম ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছিটমহল হস্তান্তরে রাজি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও চলতি অধিবেশনে তা রাজ্যসভায় পাশ হতে পারছে না। অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণে কার্যত অচল হয়ে গিয়েছে রাজ্যসভা। আর সামান্য যে ক’দিন হাতে রয়েছে, তার মধ্যে এই বিল পাশ করানো সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক। তবে এ বার না হলেও পরের সুযোগে এই বিল পাশ করাতে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছে মোদী সরকার।
এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ভারতে এসে সফরটিকে সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছেন আব্দুল হামিদ। প্রথমে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী-সহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি দিল্লিতে বৈঠক সারবেন। দিল্লি থেকে আগরা এবং অজমেঢ় শরিফ যাওয়ার কথা তাঁর। এর পর যাবেন কলকাতা। বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সাম্মানিক চেয়ারের কথা ঘোষণা করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গে এসে ওই চেয়ারের উদ্বোধন করুন। কিন্তু তিস্তা চুক্তি না-হলে হাসিনার পক্ষে মমতার রাজ্যে যাওয়া যে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক হবে না, সে কথাও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। কলকাতা থেকে হামিদ যাবেন শান্তিনিকেতন, সেখানে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন তিনি। মমতাও শান্তিনিকেতনের এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন।