ভোট সবে মিটেছে, ফল বেরোয়নি। তার মধ্যেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিল তৃণমূলে।
বোমাবাজি হল, লাশ পড়ল আউশগ্রামে। দলীয় কাউন্সিলরের অফিসে হামলায় নেতা গ্রেফতার হলেন হাবরায়। হলদিয়ায় লাগানো হল আগুন। যদিও বেশির ভাগ জায়গাতেই তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সিপিএমই হামলা চালিয়েছে।
বর্ধমানের আউশগ্রাম এলাকার ভুঁয়েরা গ্রামে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছে। গত বিধানসভা ভোটের পরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সুকুমার সেন তৃণমূলে যোগ দেন। এর পর থেকে মাঝে-মধ্যেই তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দলের পুরনো নেতা লুতফর রহমানের গোষ্ঠীর বিবাদ বাধে। বোমাবাজিও হয় প্রায়শই।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফের দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। বোমায় জখম হন সুকুমার-গোষ্ঠীর তিন জন। রাতেই লুতফরের অনুগামীদের বাড়িতে হামলা হয়। নিখোঁজ হয়ে যান বনমালী শেখ (২৫) নামে এক যুবক। বুধবার সকালে গ্রামেরই একটি নালার পাশে তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে। লুতফরের অভিযোগ, “সুকুমারের লোকেরাই বনমালীকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।” তা উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই বনমালীকে খুন করেছে।”
মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে বনমালীর বাবা এবং দাদাও রয়েছেন। এ দিন আউশগ্রাম থানায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বনমালীর মা। সিপিএমের গুসকরা জোনাল সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক দাবি করেন, “ভুঁয়েরা গ্রামে তো আমাদের পতাকা তোলারই লোক নেই, খুন করবে কে? গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতে তৃণমূল উল্টোপাল্টা বলছে।” সুকুমারবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার মীরাজ খালিদ বলেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় আবার তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণপদ দাসের অফিসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে দলেরই নেতা দিলীপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তাতে লব মজুমদার নামে এক তৃণমূল কর্মী জখম হন। প্রথমে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। দিলীপবাবু ও কুশ মারিক নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই রাতেই আবার কৃষ্ণপদবাবুর লোকজন তাঁদের এক কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ দিলীপবাবুর অনুগামীদের। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গোটা ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়ার বনবিষ্ণুপুরে এ দিন তৃণমূলের একটি ওয়ার্ড কমিটির অফিসে আগুন লাগে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। মহিষাদলের কাঞ্চনপুর ও জগৎপুরেও শাসকদলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সব ক’টি ক্ষেত্রেই অবশ্য সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।