বণ্টন এলাকায় চলছে স্পট বিলিং-এর কাজ।
লক্ষ্য মূলত দু’টো। স্বচ্ছতা আর আদায় বৃদ্ধি। এই জোড়া লক্ষ্যে পৌঁছতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকার সর্বত্রই এ বার বাড়ি বাড়ি লোক গিয়ে মিটার দেখে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের হাতে বিল ধরিয়ে দেবেন। ডাকে বিদ্যুতের বিল পাঠানোর ব্যবস্থা ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে।
পুরনো ব্যবস্থার বিদায় কেন?
বণ্টন সংস্থার বক্তব্য, ডাকে পাঠালে অনেক সময়েই গ্রাহকের হাতে বিল পৌঁছয় অনেক দেরিতে। তা ছাড়া যে-সব কর্মীর উপরে মিটার দেখার দায়িত্ব থাকে, তাঁদের অনেকেই এলাকায় না-গিয়েই অফিসে বসে গড় অঙ্কের বিল বানিয়ে দেন বলে অসংখ্য অভিযোগ আসে। এতে অনেক ক্ষেত্রেই সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই বাড়ি গিয়ে গ্রাহকের সামনে মিটার দেখে হাতে হাতে বিল ধরানোর বলেই এই পরিকল্পনা। ইতিমধ্যেই বণ্টন সংস্থার এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চালিয়ে সুফল পাওয়া গিয়েছে। তাই রাজ্যের সর্বত্রই এই পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।
পুরনো ব্যবস্থার বদল ঘটাতেই বছর দেড়েক আগে আসানসোল, দুর্গাপুর, ব্যারাকপুর, বারুইপুর-সহ রাজ্যের বেশ কিছু জেলা ও মহকুমা শহরে নতুন পদ্ধতিতে বিল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ডাকে বিল পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই সব এলাকায়। মিটার দেখার জন্য সংস্থার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাহকের সামনেই মিটার দেখে বিল দেন। এতে গ্রাহক দেখে নিতে পারেন, সত্যি তাঁর মিটার ওই ‘রিডিং’ দিচ্ছে কি না অর্থাৎ কী পরিমাণ বিদ্যুৎ তিনি খরচ করেছেন। আর এর জন্য হিসেবমতো কত টাকা তাঁকে মেটাতে হবে। এতে দু’তরফেই স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
মিটার দেখার পরে কী ভাবে হাতে হাতে বিল পাচ্ছেন গ্রাহক?
বণ্টন সংস্থা তাদের কর্মীদের হাতে একটি যন্ত্র দিয়ে দিচ্ছে। সেই যন্ত্রের মস্তিষ্কে গ্রাহকের নাম-ঠিকানা, কী ধরনের বিদ্যুৎ-সংযোগ রয়েছে, তার সমস্ত তথ্য থাকছে। বিদ্যুৎকর্মীরা গ্রাহকের সামনে মিটার দেখে কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, সেটা বোতাম টিপে যন্ত্রে লিখে নেবেন। সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্র থেকে ওই গ্রাহকের বিল বেরিয়ে আসবে। গ্রাহক সেই বিল দেখে মিটারের ঠিক রিডিং নেওয়া হয়েছে কি না, যাচাই করে নিতে পারবেন। গোটা ব্যাপারটাই গ্রাহকের সামনে হলে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠারও অবকাশ থাকবে না।
বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “আমাদের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় এই ‘স্পট বিলিং’ ব্যবস্থা চালু করে ভাল ফল মিলেছে। পরিকাঠামো নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। তাই বাকি এলাকায় এত দিন এটা চালু করা যায়নি। এ বার তা করা যাবে।” এতে বিলের টাকা আদায়েও গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে যে-সব এলাকায় এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেখানে এমনটাই হয়েছে বলে বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশের দাবি। বিদ্যুৎকর্তারা মনে করছেন, গোটা রাজ্যে এই ব্যবস্থা ঠিকঠাক চালু হলে সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতিও কিছুটা ভাল হবে। যে-টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো বা নানান ঝক্কি সামলাতে হতো, নতুন ব্যবস্থায় অনেক কম সময়েই তা হাতে আসবে।
তবে গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, স্পট বিলিংয়েও সমস্যা আছে। বণ্টন সংস্থার যন্ত্র যে-কাগজে বিল ছাপে, কিছু দিন পরে তা কার্যত সাদা হয়ে যায়। ওই কাগজের উপরে কালির আয়ু দীর্ঘ নয়। তাই গ্রাহকদের বিলের প্রতিলিপি তৈরি করে রাখতে হয়। আবার অনেকের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রেও যিনি মিটার পড়ছেন, তিনি অসৎ উপায়ে গ্রাহকের বিল কম বা বেশি করে দিতে পারেন।
বণ্টন সংস্থার কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অবিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, স্পট বিলিং ব্যবস্থাটি আধুনিক। দেশের অধিকাংশ বণ্টন এলাকায় বিল আদায়ের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে। এ রাজ্যেও গত এক-দেড় বছর যে-সব এলাকায় এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেখান থেকে খুব বেশি অভিযোগ পাওয়া যায়নি।