বাংলা তাঁর ক্রিকেট জীবনে বরাবরই পয়া। সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু। তার পরেও ইডেন তাঁকে কখনও ফেরায়নি। কিন্তু রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলায় ব্যাট করতে নামতে চেয়েও ঠিক যেন জুত করতে পারছেন না মহম্মদ আজহারউদ্দিন। অবস্থা এমন যে তাঁর দু’কুলই যাবার জোগাড়।
পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। অভিযোগ, তার পর থেকে আর সে মুখো হননি। অতএব এখন আর তাঁকে মোরাদাবাদে ঢুকতে দিতেই চান না সেখানকার কংগ্রেস নেতারা। সেটা আঁচ করে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের কোনও ‘নিরাপদ’ আসন থেকে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন আজহার। বড় মুখ করে নিজেই জানিয়েছিলেন সেই সম্ভাবনার কথা।
কিন্তু এমনিতেই এ রাজ্যে কংগ্রেসের নিশ্চিত আসন নেহাত হাতে গোনা। তার পরেও মোটামুটি ভাল সম্ভাবনা আছে এমন কোনও আসনে টিকিট পাওয়ার আশা না-দেখে আজহার ইদানীং তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে খবর। গোড়ায় অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি আজহারের বার্তা ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যেন জোরদার প্রার্থী দেওয়া না হয়। এর পর গত কাল দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারির মাধ্যমে তিনি সরাসরি তৃণমূল প্রার্থী হওয়ারই প্রস্তাব দেন। জানান, তাঁর পছন্দের আসন বসিরহাট।
আজহারের এই প্রস্তাবে অবশ্য মোটেই উৎসাহ দেখাচ্ছে না তৃণমূল। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে ইদ্রিস আলির নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তার পরেও হয়তো আজহারের নাম বিবেচনা করা যেত। তাঁর সম্পর্কে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাবও নরম। কিন্তু সব মিলিয়ে আজহারের ভাবগতিক মোটেই আস্থা জাগানোর মতো নয়। একে তো সাংসদ হিসেবে তাঁর রেকর্ড খুব খারাপ। তার উপর বেটিং কেলেঙ্কারির আঁচ তাঁর গা থেকে পুরোপুরি মুছে গিয়েছে বলেও মনে করেন না তৃণমূল নেতৃত্ব।
আজহার নিজে সরাসরি টিকিট চেয়ে আর্জি না-জানানোটাও তৃণমূল নেতৃত্বের উৎসাহ না-দেখানোর অন্যতম কারণ। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, দল কেন আগ বাড়িয়ে আজহারকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করবে! তিনি তো এখনও কংগ্রেস ছাড়ার কথা ঘোষণা করেননি। তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী করার কথা বলার পরে যদি তিনি কংগ্রেসের টিকিটেই লড়বেন বলেন, তখন কী হবে। তখন তো তৃণমূলেরই মুখ পুড়বে! এক শীর্ষ নেতার মতে, কংগ্রেসের স্মার্ট সংখ্যালঘু মুখকে দলে টানার ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের একাংশের উৎসাহ থাকলেও আজহারকে ঘিরে সঠিক কৌশলই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-মুকুল রায়। সেটা হল তাঁর সুবিধাবাদী রাজনীতিটা স্পষ্ট করে দেওয়া। এর পর আজহার কংগ্রেসের টিকিটে এ রাজ্য থেকে লড়লেও বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না।
ঘটনা হল, আজহারের প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও এখন বীতশ্রদ্ধ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, “আজহারই অনেক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রার্থী হতে চেয়ে ঘ্যান ঘ্যান করছিলেন। আমিও ওঁকে প্রার্থী করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু ইদানীং ওঁর উৎসাহে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সে কথা আমি হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছি।”
এ ব্যাপারে আজ আজহারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর আপ্ত সহায়ক প্রতিবারই জানান, তিনি বৈঠকে ব্যস্ত। তবে আজহার যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন সে কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ঘটনা হল, আজহারের এই দোলাচলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও বেশ অখুশি। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “ওঁকে মোরাদাবাদেই ফের প্রার্থী করা উচিত। নইলে প্রার্থী করাই ঠিক হবে না।” রাহুল ঘনিষ্ঠ আর এক নেতা বলেন, দলের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে না গেলে হয়তো আজহারের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানই নেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত হয়তো আজহারকে প্রার্থী করা হবে। সেটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে, না ঝাড়খণ্ডের রাঁচি আসন থেকে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বুধবার দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে।