রাজ্যের শিল্পচিত্র এমনিতেই করুণ। নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। চালু কারখানাতেও রাজ্যের শাসক দল এবং তাদের শ্রমিক সংগঠনের কর্মীদের দাদাগিরি অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের কেনা জমি জিন্দলরা ফিরিয়ে দেবে বলে জানানোয় মুখ্যমন্ত্রী কেন আপ্লুত, প্রশ্ন তুলল রাজ্য বিজেপি।
প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ না হওয়ার অভিযোগে জমি ফেরানোর জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই জিন্দলদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শেষ পর্যন্ত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি কেনা ২৯৪ একর জমি জিন্দল বিনা পয়সায় ফিরিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। একে ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের ‘মহানুভবতা’ বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও দাবি করেন, সিঙ্গুরেও এই ভাবেই টাটার কাছ থেকে না হওয়া ন্যানো প্রকল্পের জমি ফেরত চেয়েছিল তাঁর সরকার। জিন্দলের সিদ্ধান্ত যে সেই প্রেক্ষিতে একটা ‘বড় বার্তা’, তা-ও উল্লেখ করেন মমতা। আর ঠিক এই জায়গাতেই তাঁকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বার্তাটি বড় সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটি যে রাজ্যের শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের পক্ষে নেতিবাচক বার্তা, তা বোঝার ক্ষমতাই নেই মমতার! বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে শিল্পপতিদের বিনিয়োগ করতে ডাকছেন। বলছেন, জমি কোনও সমস্যা হবে না। আর এক দিকে জিন্দল শালবনিতে জমি ফিরিয়ে দিলে তিনি আনন্দে আপ্লুত হচ্ছেন! মুখ্যমন্ত্রীর বোঝার সামর্থ্যই নেই, এতে গোটা দেশের শিল্পমহলে কী নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে!”
বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূল সরকার শিল্প গড়তে ব্যর্থ। বস্তুত, বিরোধী থাকাকালেই তারা এ ব্যাপারে নিজেদের অপদার্থতার প্রমাণ দিয়েছিল। সিঙ্গুর থেকে টাটার ন্যানো প্রকল্প তাড়িয়েই তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য রাজ্যের উন্নয়ন জলাঞ্জলি দিতেও তিনি প্রস্তুত। রাহুলবাবু বলেন, “টাটাকে তাড়ানোর পর থেকেই শিল্পপতিরা আর এ রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চান না। জিন্দলদের সিদ্ধান্তে শিল্পপতিদের হতাশা আরও বেড়েছে।” এই প্রেক্ষিতে রাহুলবাবুর বক্তব্য, “এত বড় একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করছেন হাসিমুখে! এই রাজ্য সরকার দিয়ে যে বাংলার উন্নতি সম্ভব নয়, তা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।”