পঞ্চায়েত ভোটের আগে ছিটমহল হস্তান্তরের বিপক্ষে মত দিলেও লোকসভা ভোটের মুখে সুর নরম করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার উত্তরবঙ্গে এসে সোমবার তিনি স্পষ্টতই বললেন, “যে ছিটমহলগুলি বিনিময় করলে সমস্যা হবে না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার পরে সেই ছিটমহলগুলি বিনিময় করা যেতে পারে।” মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোচবিহারে গিয়ে ‘এক ছটাক’ জমিও হস্তান্তরের প্রশ্ন নেই বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। ওই সময় রাজ্যসভায় পূর্বতন ইউপিএ সরকারের আনা স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলেরও বিরোধিতা করেন তৃণমূল সাংসদরা। নিজের ফেসবুক ‘পেজে’ও ছিটমহল বিনিময় নিয়ে আপত্তির কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। দল সূত্রের খবর, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বিষয়টি নিয়ে দলনেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেন। এই অবস্থায়, ছিটমহল নিয়ে কট্টর অবস্থান থেকে মুখ্যমন্ত্রী সে সরে আসছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছিল লোকসভা ভোটের আগেই। ভোটের প্রচারে গত ১২ এপ্রিল দিনহাটার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, ছিটমহলের বাসিন্দাদের উপর তিনি জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চান না। বাসিন্দাদের যে ভাবে সুবিধে হবে, আলোচনার মাধ্যমে তাই করা হবে।
ভোটের মুখ চেয়েই মুখ্যমন্ত্রী অবস্থান বদল করেছেন বলে সে সময়ে বির্তকও দানা বাঁধে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহর দাবি, “বিজেপি-র মোকাবিলা করতেই মুখ্যমন্ত্রী এখন ছিটমহল নিয়ে নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন।” তাঁর যুক্তি, বিজেপি ছিটমহল বিনিময়ের বিপক্ষে বলেই তৃণমূল ছিটমহল বিনিময়ের পক্ষে মত দিচ্ছে। তাঁর কথায়, “তৃণমূল চাইছে ছিটমহল বিনিময়ের কথা বলে ওই এলাকায় ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করতে।” তবে তৃণমূল সূত্রে দাবি, ভোটের অঙ্ক কষে নয়, মানবিকতার খাতিরেই মুখ্যমন্ত্রী ছিটমহল নিয়ে সুর নরম করেছেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন ছিটমহলের বাসিন্দাদের বিভিন্ন সংগঠন। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে একটি সরকারের মানবিক রূপ দেখা যাচ্ছে।” তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে দুই বাংলার সম্পর্কেরও উন্নতি হবে। ছিটমহল ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা দেবব্রত চাকীর কথায়, “ছিটমহলের বাসিন্দাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কী বক্তব্য রেখেছেন তা ভাল করে জানার চেষ্টা করছি।”
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি সূত্রের খবর, দুই দেশের মোট ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। তার মধ্যে ভারত ভূখন্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১টি ও বাংলাদেশ ভূখন্ড ঘেরা ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ওই ছিটমহলগুলিতে বসবাসকারীদের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। তাঁদের কোনও দেশের নাগরিকত্ব, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড কিছুই নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, বিদ্যুতের মতো পরিষেবা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ছিটমহলগুলি কার্যত ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’র চেহারা নিয়ে থাকায়, সেখানে কোন দেশের আইনই বলবৎ নেই। ছিটমহলগুলি অপরাধের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে বলেও বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ।