মুম্বই দখল হয়ে গিয়েছে। এ বার স্বপ্ন কলকাতা।
দিন কয়েক আগেও কোনও বিজেপি নেতার মুখে এ কথা শোনা গেলে তাঁকে বলা যেত, দিনদুপুরে স্বপ্ন দেখছেন। আজ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু ভরদুপুরে সংসদে দাঁড়িয়ে সেই কথাটাই বলে দিলেন। তৃণমূল নেতাদের তাঁর হুঁশিয়ারি, বিজেপি সভাপতির সভা আটকে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আটকাতে পারবে না।
তৃণমূল তো বটেই, কংগ্রেস ও অন্য দলের নেতারাও বলছেন, বিজেপি নেতাদের মুখে সংসদে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজয়ের ঘোষণা কস্মিনকালেও শোনা যায়নি। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি যে নবান্নের ছাদে বিজয় কেতন ওড়াতে চায়,তা স্পষ্ট করেছেন বেঙ্কাইয়া।
গত কালই কালো টাকা নিয়ে আলোচনায় সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলকে সরাসরি কামান দাগেন বিজেপির তরুণ সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। আজ ফের সেই কালো টাকা নিয়ে বিতর্কে বিজেপির প্রবীণ নেতা বেঙ্কাইয়া সংসদীয় মন্ত্রী হিসেবে অংশ নিয়েও তৃণমূল নেতাদের কোণঠাসা করেছেন। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম বনাম তৃণমূলের লড়াই বার বার সংসদে উঠে আসত। ২০১৬-র আগে সেই লড়াইটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি বনাম তৃণমূলের।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ৩০ নভেম্বর সভা করতে যাচ্ছেন। প্রশাসন সভার অনুমতি দেয়নি। মমতার সরকারই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না, আজ সংসদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেই অভিযোগও তুলেছেন। তাঁর ভাষায়, “হাত দিয়ে সূর্যের আলো আটকানো যায় না। একই ভাবে আমাদের দলীয় সভাপতির সভা আটকে আপনারা পশ্চিমবঙ্গে সফল হবে না। এটা আপনারা বোঝার চেষ্টা করুন।” বিজেপির প্রবীণ নেতা বেঙ্কাইয়া বলেছেন, “আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম অটলবিহারী বাজপেয়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। তার পর স্বপ্ন ছিল, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কেন্দ্রে সরকার গড়বে। সেটাও বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন আমি স্বপ্ন দেখছি, মুম্বই হয়ে গিয়েছে। কলকাতাও খুব ভাল। ওখানেও যেতে হবে।” সুদীপবাবু বলেন, “বিধানসভায় আপনাদের মাত্র একটা আসন। আমরা যেখানে আছেন, সেখানেই থেকে যাবেন।” বেঙ্কাইয়া বলেন, “যদি আপনাদের কথাই সত্যি হয়, তা হলে ভাল, আপনাদের স্যালুট জানাব। যদি আমার কথা ও মানুষের ইচ্ছা শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলেও ভাল। আমি অপেক্ষা করব। খুব শীঘ্রই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে দেখা হবে।” দেখা অবশ্য সত্যিই হবে! ৬ ডিসেম্বরই কলকাতা যাচ্ছেন বেঙ্কাইয়া। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্য সরকারের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে চান। নগরোন্নয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের দাবি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে। বেঙ্কাইয়া আজ বলেন, “কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো সম্পর্ক। সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে। মুকুল রায়ের সঙ্গেও দেখা হলে কথা হয়।” রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ নিয়ে সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। এক দিকে তৃণমূলকে আক্রমণ, অন্য দিকে উন্নয়নে রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা বিজেপি সূত্র বলছে, এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। অমিত শাহের রণকৌশল হল, কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্ক থাকবে। উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জমি দখলের লড়াই ছাড়বে না।
কালো টাকা নিয়ে হট্টগোল করে তৃণমূলই সংসদে সবচেয়ে বেশি সরব হয়ছিল। তা নিয়ে গতকাল সংসদে সারদা নিয়ে আক্রমণের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলকে। আজকেও বেঙ্কাইয়া নায়ডু সারদা নিয়ে নাম না করে কটাক্ষ করেছেন। মোদী সরকার কালো টাকা নিয়ে কী পদক্ষেপ করেছে, তা ব্যাখ্যা করছিলেন বেঙ্কাইয়া। তৃণমূল সাংসদরা প্রশ্ন করায় বেঙ্কাইয়া বলেন, “আপনারা কেন এত বিচলিত? আপনারাও জানেন। কারণটা আমরাও জানি। পশ্চিমবঙ্গে ওই কারণেই তো আপনাদের পায়ের তলার জমি সরে যাচ্ছে।” সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘আপনারা স্বপ্ন দেখবেন না।” বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার পাল্টা কটাক্ষ, “ওঁরা স্বপ্ন দেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। স্বপ্ন দেখবেন কী করে? ভয়ে এখন তৃণমূল নেতাদের ঘুমই আসছে না।”