প্রতি বছর জেলা থেকে একটা করে বড় সমাবেশ বা কর্মসূচি হচ্ছে কলকাতায়। তাতে ভিড়ও হচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় বড় জমায়েত করে জেলায় দলের আদৌ উপকার হচ্ছে কি? প্রশ্ন উঠল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে। এবং প্রশ্ন উড়িয়ে কলকাতায় জমায়েত করার রেওয়াজ বহাল রাখলেন জেলা সিপিএম সম্পাদক গৌতম দেব।
এ বার ঠিক হয়েছে আগামী ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম কলকাতায় বড় সমাবেশ করবে। গৌতমবাবুর লক্ষ্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের বক্তা হিসেবে রেখে ওই সভায় জেলা থেকে অন্তত তিন লক্ষ লোক নিয়ে যাওয়া। আলিমুদ্দিনে শনি ও রবিবার জেলা কমিটির দু’দিনের বৈঠকে ওই কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকেই জেলার একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন গত তিন বছরে কলকাতায় এই বার্ষিক সমাবেশের প্রচারের জন্য স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের এলাকায় চাঁদা তুলতে হয়। বাড়ি বাড়ি প্রচারপত্র দিয়ে অর্থসাহায্য নিতে হয়। ফলে নিচুতলায় দলীয় কর্মীরা খুব সহজেই চিহ্নিত হয়ে গিয়ে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকাতার কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে স্থানীয় স্তরে কর্মীদের ঘরছাড়া হতে হচ্ছে।
জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু অবশ্য এমন বক্তব্য মানতে নারাজ। জেলা কমিটির জবাবি ভাষণে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দলের সুদিন ফেরাতে গেলে দুর্দিনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই হবে। হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে গেলে বাড়ি বাড়ি যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও সহজ পথ নেই। বৈঠকের পরে রবিবার গৌতমবাবু বলেন, “এখন সিপিএম করতে গেলে মার খেতে হবে। পুলিশ হয়রান করবে। কর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা হবে। দলের সুদিনে অনেকেই এসে জড়ো হন। এখন যাঁরা দলের হয়ে কাজ করছেন, তাঁরাই আসল সম্পদ।”
দলের অন্দরের এমন আশঙ্কা গৌতমবাবু উড়িয়ে দিলেও বিষয়টি যে জেলা নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে, বৈঠকের সিদ্ধান্ত থেকে তা পরিষ্কার। ঠিক হয়েছে জেলা কমিটির সদস্য, জোনাল এবং লোকাল কমিটির সম্পাদকদের নিয়ে আগামী ১২ অগস্ট ব্যারাকপুরে একটি কর্মিসভা হবে। সেখানে বুদ্ধবাবু এবং গৌতমবাবু ব্যাখ্যা করবেন কেন এমন বড় কর্মসূচি নিতে হচ্ছে। তাই গোটা জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্তরে ১৪৫টি কর্মিসভা হবে। দলের কর্মীদের প্রশ্ন ও আশঙ্কার জবাব দিতেই ওই কর্মিসভার আয়োজন। এর বাইরে গত কয়েক বছরের মতোই অক্টোবর, নভেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের নিয়ে জেলা জুড়ে বেশ কিছু জনসভা করবে জেলা সিপিএম।
বড় জমায়েতে যাওয়ার পাশাপাশি লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গৌতমবাবুরা। লোকসভা ভোটে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন বা ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকা ছিল, এমন অভিযোগে ১ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরা সকলেই সিপিএমের জোনাল, লোকাল এবং শাখা কমিটি স্তরের সদস্য। এই সব কর্মীদের উদ্দেশে গৌতমবাবুর স্পষ্ট বার্তা, “অনেকে বলেছেন, তৃণমূলের ভয়ে তাঁরা কাজ করতে পারেননি। অনেকে আবার সাহসে ভর করে লড়েছে। ভিতু, কাপুরুষ সদস্যদের শাস্তি দেওয়া হবে। কাপুরুষরা সমর্থক হয়ে থাকবে।”