কর্মীদের পাশে থাকতে পথে রাত্রিবাস বিমানদের

বাকি কলকাতা যখন রাত জাগছে বিশ্বকাপ দেখার জন্য, শহরের হৃৎপিণ্ডে তখন এক খণ্ড অন্য কলকাতা! সেখানে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার জন্য রাস্তায় দিনরাত বসে আছেন বিমান বসু, সূর্যকাম্ত মিশ্ররা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:২০
Share:

ধর্মতলায় বামেদের অবস্থানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

বাকি কলকাতা যখন রাত জাগছে বিশ্বকাপ দেখার জন্য, শহরের হৃৎপিণ্ডে তখন এক খণ্ড অন্য কলকাতা! সেখানে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার জন্য রাস্তায় দিনরাত বসে আছেন বিমান বসু, সূর্যকাম্ত মিশ্ররা!

Advertisement

তৃণমূলের আক্রমণের মুখে বাম নেতারা শুধু বিবৃতি দিয়ে বা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেই ক্ষান্ত হন না কর্মী-সমর্থকদের কাছেই এই বার্তা স্পষ্ট করে দিতে টানা ৪৮ ঘণ্টা রাজপথে অবস্থানের সিদ্ধান্ত। সেই জন্যই ভরা বর্ষায় এবং ভরা বিশ্বকাপের আসরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তাঁবু খাটিয়ে বসেছেন বিমানবাবুরা। সঙ্গে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত, নিহত পরিবারের মানুষজন। বছরখানেক আগে কেরলের বাম জোট এলডিএফ তিরুঅনন্তপুরমের সচিবালয়ের সামনে সরকার-বিরোধী এমন অবস্থান করেছিল। ক্ষমতা হারানোর পরে এ রাজ্যে বামেদের এমন কর্মসূচি এই প্রথম। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর কথায়, “শুধু কয়েক ঘণ্টা শুয়ে বা বসে থাকার জন্য এই অবস্থান নয়। এই আন্দোলন আসলে উঠে দাঁড়ানোর জন্য!”

মঞ্চ থেকেই সূর্যবাবু বলেন, “তিন বছরে অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু যতটা লড়াই করা দরকার ছিল, ততটা করতে পারিনি, যাতে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারি।” সূর্যবাবুর বার্তা, এই দুর্বলতা কাটাতে হবে। ঝান্ডা দেখার দরকার নেই। যেখানে মানুষ আক্রান্ত, গণতন্ত্র আক্রান্ত, বামপন্থীদের সেখানেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে। যদি তাঁরা তাড়িয়ে না দেন!

Advertisement

দলীয় কর্মীদের উপরে হামলা বন্ধ ও রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৯ জুন বিমানবাবুর নেতৃত্বে বাম নেতারা নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দাবিপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। বিমানবাবুদের দাবি, এর পরেও সরকার ‘রাজধর্ম’ পালন করেনি। এর প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে তাঁদের রাজপথে অবস্থান। ১০ দফার মধ্যে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও রয়েছে। প্রথম রাত ধর্না-স্থলেই কাটিয়েছেন বিমানবাবু, সূর্যবাবু-সহ ফ্রন্টের প্রথম সারির নেতারা। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতাও ধর্মতলায় অনশন বা সিঙ্গুরে টানা ২৪ দিনের অবস্থান করেছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য সন্ধ্যায় অবস্থান-মঞ্চে এলেও শারীরিক কারণেই সেখানে রাত কাটাননি।

নবান্নে গিয়ে বিমানবাবুরা আত্মসমর্পণ করেছেন কি না, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল বাম শিবিরেই। বিমানবাবু এ দিন অবস্থান-মঞ্চ থেকে জবাব দিয়েছেন, “কেউ কেউ বলছেন, কেন মুখ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দিতে গেলাম? বুঝতে হবে, উনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আমার মুখ্যমন্ত্রী! যাঁরা এখানে অবস্থান করছেন, তাঁদেরও মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের মধ্যে এই বোধ কাজ করেছে বলেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম।”

১৯৭৫-এর ২৫ জুন জরুরি অবস্থা জারি করেন ইন্দিরা গাঁধী। বিমানবাবু জানান, রাজ্যের গণতন্ত্র হরণ করা হচ্ছে বলেই অবস্থান শুরুর জন্য আজকের দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা, হতদরিদ্র বাম সমর্থক পরিবারের লোকজন স্বল্প কথায় বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁদের পরিজনেরা কী ভাবে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। শাসক পক্ষকে বিঁধেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জয়ন্ত রায়, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামীরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement