শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত। আছেন উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসিও। ছবি: সুমন বল্লভ
মাত্র কয়েক ঘণ্টায় বদলে গেল ছবিটা।
শুক্রবার পর্যন্ত কমিশনে জমা পড়া ১৮০টি অভিযোগের মধ্যে ১০০টির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করেছিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) সুনীল গুপ্তর দফতর। আর শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০-এ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত কলকাতায় পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগে সিইও-র দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে শনিবার পর্যন্ত যে ১৮৩টি অভিযোগ জমা পড়েছিল, তার ১৭৫টি-র ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে মেল মারফৎ।
সিইও-র সেই বার্তা পাওয়ার পরে বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের নালিশকে গুরুত্ব দিতে নয়, নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই তড়িঘড়ি এমন পদক্ষেপ করেছে সিইও-র দফতর। কারণ, গত ২৫ মার্চ উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসির সফরের সময় সিইও-র দফতরের কাজ নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করার পরে সিইও-কে তিনি সতর্ক করে গিয়েছিলেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর।
ঘটনাচক্রে এ দিন রাতেই সিইও, রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা)-সহ একাধিক কর্তার সঙ্গে বৈঠকে সিইও-র দফতরের কাজের এই অগ্রগতিতে মোটের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। তবে একই সঙ্গে আজ, রবিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ ওঠা কর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা।
নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার। —নিজস্ব চিত্র
কারণ যা-ই হোক, ঘটনা হল, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫টি অভিযোগ সম্পর্কে পদক্ষেপ করেছে সিইও-র দফতর। যেমন গত মঙ্গলবার শিবপুরের কাসুন্দিয়ায় রাজ্য নির্বাচন দফতরের এক কর্মীর হেনস্থার ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল হাওড়া পুলিশ। শনিবার সৌরভ রায় ওরফে বুবাই নামে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি, ওই দিন ঘটনাস্থলে হাজির থাকা হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ বিনোদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় ও কাউন্সিলর বিশ্বনাথ দাসকে নোটিস পাঠিয়ে ডেকে পাঠায় পুলিশ। ঘণ্টা দেড়েক জিজ্ঞাসাবাদের পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রেও সিইও-র দফতর সক্রিয় হয়েছে।
সিইও দফতরের কোনও আধিকারিক এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও তাঁদের একাংশের ব্যাখ্যা, রোজই ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে কিছু অভিযোগ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে যখন যেমন রিপোর্ট মিলেছে, অভিযোগকারী দলগুলিকে তখনই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অফিসারদের একাংশের দাবি, অভিযোগের তদন্ত ও তার পরিপ্রেক্ষিতে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে দলগুলি খুশি। কারণ, কেউই অসন্তোষের কথা দফতরে চিঠি দিয়ে জানায়নি।
তবে কমিশনের কর্তাদের আর একটি অংশের বক্তব্য, জুৎসির মতো সম্পতের কাছেও যে রাজনৈতিক দলগুলি সিইও-র দফতরের বিরুদ্ধে সরব হবে, তা বিলক্ষণ জানেন সেখানকার অফিসারেরা। তাই কমিশনের ফুল বেঞ্চের মুখোমুখি হওয়ার আগে সিইও-র দফতর এক রকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে।
কেমন সেই প্রস্তুতি? শনিবার সিইও-র দফতর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসনের যে ৩২ জন অফিসারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কাজে গাফিলতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে ১০ জনের ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই তালিকায় একাধিক জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার আছেন। তাঁদের অনেকেই আজ, রবিবার কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে হাজির থাকবেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সম্পতের সঙ্গেই কলকাতা এসেছেন বিনোদ জুৎসি। রাতে পটনা থেকে সরাসরি চলে আসেন আরও দুই কমিশনার হরিশঙ্কর ব্রহ্ম ও নাসিম জায়েদি। ফুল বেঞ্চে আছেন ভোটের খরচ খতিয়ে দেখার বিশেষ সেলের প্রধান পি কে দাসও। ১৭ এপ্রিল কোচবিহার, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলাকে দিয়ে শুরু হবে এ রাজ্যের পাঁচ দফার ভোটপর্ব। এ দিন ওই তিন জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চে’র বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে জুৎসি আলাদা করে তিন জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। ওই তিন জেলায় ভোটপর্বে, বিশেষত চা-বাগান এলাকায় ভোটের সময় টাকা ও মদ বিলির অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসকদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই এলাকায় ভোটপ্রচারে খরচের বিষয়েও নজর রাখতে বলা হয়েছে। তিন জেলাশাসকই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। কমিশন সূত্রের খবর, আজ, রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। পরে তারা বাকি জেলাগুলির পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বসবে। সন্ধ্যায় বৈঠক রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে।