কপিলের শ্রদ্ধানুষ্ঠানে পৃথক আয়োজন ঠাকুরবাড়িতে

মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বিভাজন ছিলই। সেই বিভাজনের ছায়া এ বার কি এসে পড়ল মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের শ্রাদ্ধবাসরেও? প্রয়াত সাংসদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান (মতুয়াদের কাছে যা পরিচিত শ্রদ্ধানুষ্ঠান বলে) ছিল বৃহস্পতিবার। গত ১৩ অক্টোবর মারা যান কপিল। গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে এ দিন দু’টি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বিভাজন ছিলই। সেই বিভাজনের ছায়া এ বার কি এসে পড়ল মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের শ্রাদ্ধবাসরেও?

Advertisement

প্রয়াত সাংসদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান (মতুয়াদের কাছে যা পরিচিত শ্রদ্ধানুষ্ঠান বলে) ছিল বৃহস্পতিবার। গত ১৩ অক্টোবর মারা যান কপিল। গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে এ দিন দু’টি পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেয়েদের নিয়ে এক দিকে পারলৌকিক কাজকর্ম সারেন কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালা। একই বাড়ির অন্য প্রান্তে, কপিলবাবুর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণের দুই ছেলে সুব্রত ও শান্তনু পৃথক অনুষ্ঠান করেন। দু’তরফে লোকজন জড়ো হয়েছিল ভালই। শনিবার খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান আছে বলে ঠাকুরবাড়ি সূত্রে জানানো হয়েছে। একটিই নিমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে। সেখানে অবশ্য পরিবারের সকলের নামই আছে।

কিন্তু একই পরিবারের কর্তার প্রয়াণে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন দরকার পড়ল কেন?

Advertisement

মমতাবালা বলেন, “আজ সকালেই গিয়ে ওঁদের বলি, এক সঙ্গে অনুষ্ঠান করার কথা। ওঁরা কেন এলেন না, বলতে পারব না। আমি আমার কর্তব্য করেছি।” কপিলবাবুর মেয়ে চন্দ্রলেখার কথায়, “মা আমন্ত্রণ জানানোর পরে ওঁদের তরফে কোনও জবাবই মেলেনি।”

কী বলছে মঞ্জুলের পরিবার?

সুব্রত বলেন, “জ্যেঠিমা বলেছিলেন, মেয়েরা কাজ করবে। সে জন্য আমরা পরিবারের ছেলেরা আলাদা কাজ করেছি।” তাঁর আরও সংযোজন, “আসল কথা হল জ্যেঠুকে শ্রদ্ধা জানানো। কে কোথায় কী ভাবে সেটা করল, তা বড় কথা নয়।” এই প্রসঙ্গেই সুব্রত জানান, দেশের নানা প্রান্তে এ দিন মতুয়া ভক্তেরা শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।

ঠাকুরবাড়ির একাংশের বক্তব্য, কপিল-মঞ্জুল দু’ভাইয়ের সংসার পৃথক। তার ফলে আলাদা শ্রাদ্ধবাসরের আয়োজন খুব অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। পুরনো তিক্ততা যা-ই থাক, সুব্রত-মঞ্জুলরা অবশ্য কপিলবাবুর শেষ সময়ে পাশেই থেকেছেন। বেলভিউয়ে কপিলবাবু মারা যাওয়ার পরে দেহ নিয়ে ঠাকুরনগরে আসেন তাঁরা। সৎকারের দিন সুব্রতকে চোখের জল ফেলতেও দেখেছেন মতুয়া ভক্তেরা।

যদিও কপিলের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের যে উপনির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়েছে, তাকে সামনে রেখে মতুয়া পরিবারের মধ্যেই টিকিটের লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে এ দিনের ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূল শিবিরের একাংশ। ঠাকুরবাড়িরই কেউ বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে উপনির্বাচনে দাঁড়াবেন, তা এক রকম নিশ্চিত। কিন্তু মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত, নাকি কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালা কার উপরে শেষমেশ ভরসা রাখবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতিতে দু’দিন আগেই সুব্রতবাবুর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মতুয়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার কথা পোস্টে জানিয়েছিলেন সুব্রত। যার পিছনে রাজনৈতিক কারণই খুঁজে পাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। লোকসভা ভোটের আগে বড় নাতি সুব্রতর নামই প্রথমে প্রস্তাব করেছিলেন বড়মা। পরে বড় ছেলে কপিলকেই এগিয়ে দেন তিনি। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যপদ ছাড়ার ঘোষণা উপনির্বাচনে সুব্রতর টিকিট পাওয়ার কোনও কৌশল কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের একটি অংশও মনে করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দলের উপরে চাপ রাখতে চাইছেন তরুণ তুর্কি সুব্রত। যার পিছনে তাঁর বাবা মঞ্জুলের ভূমিকাও থাকতে পারে।

সুব্রতর এ দিনের আরও কিছু বক্তব্য সেই সব জল্পনাকেই উসকে দিয়েছে। রাজনীতিতে কী তা হলে কখনওই ফিরবেন না ভাবছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত বলেন, “ভবিষ্যতে সে সম্ভাবনা আছেই। গুরুচাঁদ ঠাকুর (মতুয়া ধর্মগুরু) বলে গিয়েছিলেন, রাজশক্তি ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়।” তাঁর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে গত দু’দিনে তৃণমূলের কোনও নেতা ওই বিষয়ে যোগাযোগ করেননি বলেও মন্তব্য করেছেন সুব্রত। সে ক্ষেত্রে বিজেপির তরফে লোকসভা ভোটে কোনও প্রস্তাব এলে কী ভাববেন? সুব্রত বলেন, “এখনও কোনও দলের কেউ প্রস্তাব দেননি। যদি তেমন কিছু ঘটে, মতুয়া মহাসঙ্ঘ ও মতুয়া থিঙ্কট্যাঙ্কের (বিশিষ্ট মতুয়া) সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement