বাংলার বাইরে সারা দেশেই সিপিএমের ক্ষেতমজুর সংগঠন রয়েছে। বাকি দেশের মতো এ বার এ রাজ্যেও কৃষক সভার বাইরে ক্ষেতমজুরদের জন্য পৃথক সংগঠন গড়তে চাইছে আলিমুদ্দিন। তবে বাংলার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পৃথক সংগঠন করা উচিত কি না, দলের মধ্যেই সেই প্রশ্নে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন দলেরই একাংশ।
গণসংগঠনের কাজ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। কৃষকের শিক্ষিত ছেলে আর কৃষি কাজ করতে চাইছে না। বাড়ছে নগরায়ন। শহরে নতুন পেশা তৈরি হচ্ছে। এই সব মাথায় রেখেই গণসংগঠনের পরিধি বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে সিপিএম। এ দিন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতে বিমানবাবু প্রস্তাব দিয়েছেন, এ বার ক্ষেতমজুরদের নিয়ে পৃথক গণ-ফ্রন্ট গড়ে তোলা হোক।
বিমানবাবুর প্রস্তাবের পাল্টা যুক্তি দেন প্রবীণ নেতা বিনয় কোঙার, বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার প্রমুখ। বিনয়বাবুর প্রশ্ন, সারা দেশেই তো ক্ষেতমজুর সংগঠন গড়ে দেখা হয়েছে। তাতে কী এমন কাজ হয়েছে? রাজ্যে ভূমি সংস্কারের ইতিহাস মাথায় রেখে কৃষি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে দেখার কথা বলেছেন অমলবাবু। আবার নেপালদেব ভট্টাচার্য, তড়িৎ তোপদারের মতো নেতারা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ক্ষেতমজুরদের জন্য আলাদা সংগঠন হওয়া উচিত বলে সওয়াল করেছেন। রাজ্য সম্পাদকের রিপোর্টে বেঁধে দেওয়া ১০ দফা আশু কর্তব্যকে ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ বলেও উল্লেখ করেন তড়িৎবাবু! সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “ক্ষেতমজুরদের সংগঠন গড়ার মূল প্রস্তাব এসেছিল বিগত সম্মেলনে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও সম্ভবত আসন্ন সম্মেলনেই হবে।”
ওয়ারাঙ্গলে এই মুহূর্তে সিপিএমের সারা ভারত ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলন চলছে। আর তখনই রাজ্য কমিটিতে বিমানবাবুর পেশ-করা রিপোর্টে বলা হয়েছে: জমি হারিয়ে কৃষক ক্ষেতমজুরে পরিণত হচ্ছে। কৃষিতে পুঁজি ও যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ক্ষেতমজুরদের কাজের দিনও কমছে। রিপোর্টের ভাষায়, ‘এখন অতীতের মতো শুধু দিনমজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করলেই চলবে না। ক্ষেতমজুরদের মধ্যে থেকেই এটা উঠে আসছে’। সিপিএম সূত্রের খবর, গণসংগঠনগুলির তরফে এ দিন রাজ্য কমিটিতে রিপোর্ট করেন শ্যামল চক্রবর্তী, দীপক দাশগুপ্ত, তরুণ রায়, মিনতি ঘোষ, সায়নদীপ মিত্র ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গে চা-বাগানে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ আন্দোলন যে কার্যকর হচ্ছে, সেই কথা জানান একাধিক প্রতিনিধি। দুর্গাপুরের এক কারখানায় মালিক পক্ষের সঙ্গে চুক্তির সময় শ্রমিকেরা ধর্মঘট করবেন না বলে লিখিত আশ্বাস কী ভাবে দিয়ে এসেছেন সিটু নেতারা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার দুই নেতা। বিমানবাবুর পরামর্শ, গণসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের স্থানীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। আলিপুরদুয়ারে নতুন জেলা সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক সলিল আচার্যকে রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয়েছে।