কোরপানের খুনিরা চিহ্নিত, তবু গ্রেফতার নিয়ে সন্দেহ

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শাহ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১০-১২ জন হবু চিকিৎসকের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। অভিযুক্তরা সকলেই ওই ছাত্রাবাসের আবাসিক। খুনের ঘটনায় ধৃত দুই ক্যান্টিন কর্মীকে জেরার পর তদন্তকারীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, ছাত্রাবাসের সিনিয়র আবাসিকদের ইন্ধনেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তদন্তকারীদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শাহ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১০-১২ জন হবু চিকিৎসকের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। অভিযুক্তরা সকলেই ওই ছাত্রাবাসের আবাসিক। খুনের ঘটনায় ধৃত দুই ক্যান্টিন কর্মীকে জেরার পর তদন্তকারীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, ছাত্রাবাসের সিনিয়র আবাসিকদের ইন্ধনেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তদন্তকারীদের একাংশ।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া কার্তিক মন্ডল ওরফে গণেশ এবং রুবি ওন্দিয়াকে দফায় দফায় জেরা করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ওই দুই যুবক নিজেদের দোষ কবুল করেছেন। তদন্তকারীদের তাঁরা জানিয়েছেন, ১৬ নভেম্বর সকালে এক যুবকের আর্তনাদ শুনে ছাত্রাবাসের চতুর্থ তলের ৯২ নম্বর রুমের সামনে গেলে তাঁরা দেখতে পান এক যুবককে ঘিরে ধরে ১০-১২ জন হবু চিকিৎসক মারধর করছে। পুলিশের কাছে ওই দু’জন জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন ওই যুবক এক ছাত্রের একটি মোবাইল ফোন চুরি করেছে। এর পরে তাঁরাও ওই যুবককে মারধরে হাত লাগান।

পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ঘটনায়। তাঁদের মধ্যে এনআরএসের প্রথম বষের্র ছাত্র জসিমুদ্দিনও রয়েছে। তবে পুলিশ হেফাজতে থাকা জসিমুদ্দিন পুলিশকে কোন সাহায্য না করলেও ক্যান্টিন কর্মীদের জেরা করার পর কোরপান শাহ খুনের ঘটনায় আর কারা কারা জড়িত, তা এখন স্পষ্ট বলে দাবি তদন্তকারীদের। লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “হবু চিকিৎসকদের মতো তাঁরাও প্রথমে আমাদের নানা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছিল। কিন্তু শনিবার গ্রেফতারের পর ওই ক্যান্টিনকর্মীরা পুরো ঘটনা জানিয়েছেন।”

Advertisement

এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে বাঁশের কিছু টুকরো উদ্ধার হয়েছে। একই বাঁশের টুকরো রাখা ছিল ক্যান্টিনে।” তাঁর দাবি, জসিমুদ্দিনের বয়ানের সঙ্গে কার্তিক এবং রুবির বক্তব্যের অনেকটা মিল আছে। যা থেকে প্রমাণ হয়, এই দু’জন আওয়াজ শুনে চার তলায় গিয়েছিল, কোরপানকে মারধরও করেছিল।

এ দিন ধৃত দু’জনকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবী পার্থ দাস বলেন, “এরা সাধারণ ক্যান্টিনকর্মী। এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। গরিব বলেই এদের ফাঁসানো হয়েছে।” দুই অভিযুক্তের জামিনের পক্ষে সাওয়াল করেন তিনি। এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী না থাকায় তদন্তকারী অফিসার নিজেই ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে শিয়ালদহ এসিজেএম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রীনা লামা অভিযুক্ত দু’জনকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে পুরো ঘটনাই জানতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তথ্য না-দিয়ে তাঁরা তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন। কতৃর্পক্ষ পরে বাধ্য হয়ে আবাসিকদের বিভিন্ন তথ্য পুলিশকে দিলেও আবাসিকদের ছবি দেয়নি। তদন্তে হবু চিকিৎসকদের যেন হেনস্থা করা না হয়, তা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়ে হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।

লালবাজারের এক কর্তা এ দিন বলেন, “দোষীদের ধরার ক্ষেত্রে যে প্রশাসনের উঁচু তলা থেকে বাধা আসবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে এর পর আমরা তদন্তে কতদূর এগোতে পারব তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement