এখন কোন দিকে ঢলে মতুয়ারা, জল মাপতে চাইছে সব পক্ষই

বাড়ির ছোটকর্তা রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁর হাতেই উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর। অথচ মন্ত্রী-পুত্রই কিনা লিফলেটে বার্তা ছড়িয়ে বসেছেন--উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব আদায়ে তৃণমূল তেমন নড়ে চড়েই বসেনি। কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নেশায়, মতুয়া পরিবারের কে যে কোন দিকে ঢলে পড়ছেন, ঠাওর করতে পারছেন না সীমান্তের প্রান্তিক গাঁ-গঞ্জের মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

বাড়ির ছোটকর্তা রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁর হাতেই উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর।

Advertisement

অথচ মন্ত্রী-পুত্রই কিনা লিফলেটে বার্তা ছড়িয়ে বসেছেন--উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব আদায়ে তৃণমূল তেমন নড়ে চড়েই বসেনি।

কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নেশায়, মতুয়া পরিবারের কে যে কোন দিকে ঢলে পড়ছেন, ঠাওর করতে পারছেন না সীমান্তের প্রান্তিক গাঁ-গঞ্জের মানুষ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার থেকে উদ্বাস্তুদের বিবিধ দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক, মঞ্জুল-পুত্র সুব্রত ঠাকুর। মতুয়া পীঠস্থান, গাইঘাটার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে জাঁকিয়ে মঞ্চও খাড়া করা হয়েছে। অনশনকারীদের দাবি, ২০০৩ সালে এনডিএ জমানায় তৈরি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন চাইছেন তাঁরা। সুব্রতর অনশন-কর্মসূচিতে এ দিন কিছু ক্ষণের জন্য দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতা কেডি বিশ্বাসকে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ধরিয়ে দেন, “২০০৩ সালে যে আইন হয়েছিল, তার শরিক তো ছিলেন মমতাও!”

মতুয়াদের দাবির সপক্ষে যে লিফলেট গত কয়েক দিন ধরে বনগাঁ-গাইঘাটার বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে, সেখানে এনডিএ আমলে তৈরি আইনে উদ্বাস্তুদের ‘অধিকার খর্ব’ করা কিংবা সাড়ে তিন দশকের বাম জমানার ‘উদ্যোগহীনতা’র পাশাপাশি বর্তমান শাসক দলের ‘উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না করার’ উল্লেখও রয়েছে। তা হলে?

মতুয়াদের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সখ্য বহু দিনের। নির্বাচনের আগে মতুয়াদের জন্য বারংবার ‘কল্পতরু’ হয়েছেন তিনি। ইভিএমে প্রতিদানও ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এ বার মতুয়া মহাসঙ্ঘের লিফলেটে যে বার্তা দেওয়া হল, তা মমতার পক্ষে অশনিসঙ্কেত নয় কি, জল্পনা শুরু হয়েছে তা নিয়েই। তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু দিন ধরেই মতুয়াদের পাশে আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। মতুয়ারা সে কথা ভালই জানেন।”

কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে পারিবারিক বিভাজন স্পষ্ট। কপিলের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর পৃথক কমিটি গড়ে নিজেই সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হয়েছেন। পাল্টা কমিটির মাথায় একই পদে বসেছেন কপিলের ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ। এই বিভাজনও শাসক দলের একাংশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লিফলেট প্রসঙ্গে মমতাবালা বলছেন, “টিকিট পেতেই ওরা (সুব্রত) এমন করেছে।” এ দিন তাই কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে। জেলা তৃণমূলের একটা অংশ মনে করছেন, দলকে চাপে রাখতেই সুব্রতর এই চাল। টিকিটের দাবিদার মমতাবালা। সে জন্যই আধিপত্য প্রমাণে কমিটি গড়ে সঙ্ঘাধিপতি হয়েছেন, এমনটাও মনে করে তৃণমূলের ওই অংশটি।

সুব্রত বলছেন, “সংসদে সরব হওয়ার জন্য ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে আবেদন জানিয়েছি।” কিন্তু তাঁর বাবাই তো উদ্বাস্তু দফতরের মন্ত্রী? সেই দফতরের কাজকর্ম নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন সুব্রত। যা শুনে মঞ্জুল বলছেন, “মন্ত্রী হয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলব না।” তবে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে তিনি যে ছেলের সঙ্গে আছেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

ক’দিন আগেই বনগাঁয় সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্জুলের কাছে জানতে চান, “কী মঞ্জুল! তুমি এ দেশের নাগরিক নও?” উত্তর ‘হ্যাঁ’ হওয়ায় সে দিন খুশি হয়েছিলেন মমতা। ঠাকুরবাড়ির আরও অনেকের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, সকলেই ভারতের নাগরিক। তা হলে সুব্রতদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা কোথায়?

সুব্রতর মতে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। তিনি এ দিন বলেন, “আমাদের পরিবারের সকলেই দেশের নাগরিক। কিন্তু মতুয়াদের অনেকে এখনও নাগরিকত্ব পাননি। আমরা তাঁদের জন্যই আন্দোলন করছি।”

মমতা যে কারণে ওই প্রসঙ্গ টেনেছিলেন, তার পিছনেও রাজনীতি আছে বলে দলেরই একটি অংশের মত। হাবরার সভা থেকে তার আগেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, মমতা মতুয়াদের নিয়ে ভোটের রাজনীতি করছেন। সে কথা মতুয়ারা ‘ধরে’ ফেলেছেন। তবে মতুয়ারা যা ধরতে পারেননি, তা হল, ঠাকুরবাড়ি কোন দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement