এ বার অবরোধ করে নজর টানতে চাইলেন মতুয়ারা

ক’দিন ধরে শুরু হয়েছে অনশন। তাতে কেন্দ্র-রাজ্য কারও কানে জল না ঢোকায় এ বার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের দাবিতে রবিবার দুপুরে ঠাকুরনগরে রেল অবরোধ করলেন মতুয়াদের একাংশ। বাগুইআটিতে ভিআইপি রোডও অবরোধ করা হয় কিছু ক্ষণের জন্য। ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতায় এসেছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। মতুয়াদের একাংশের মতে, মূলত তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণই ছিল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
Share:

অবরোধকারীদের সঙ্গে সুব্রত ঠাকুর। রবিবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ক’দিন ধরে শুরু হয়েছে অনশন। তাতে কেন্দ্র-রাজ্য কারও কানে জল না ঢোকায় এ বার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের দাবিতে রবিবার দুপুরে ঠাকুরনগরে রেল অবরোধ করলেন মতুয়াদের একাংশ। বাগুইআটিতে ভিআইপি রোডও অবরোধ করা হয় কিছু ক্ষণের জন্য। ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতায় এসেছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। মতুয়াদের একাংশের মতে, মূলত তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণই ছিল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য।

Advertisement

তবে কার দৃষ্টি কতটা পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে মতুয়াদের মধ্যেই। এ দিন দুপুর ২টো থেকে ঘণ্টা দেড়েক রেললাইনে অবরোধ চালানোর পরেও বিজেপি বা তৃণমূল নেতাদের কাউকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেখা যায়নি। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঠাকুর ছিলেন অবরোধের নেতৃত্বে। অনশন কর্মসূচিও চলছে তাঁরই নেতৃত্বে। বিরক্ত সুব্রতকে এ দিন বলতে শোনা গেল, “আমরা ২১ জন মতুয়া চার দিন হয়ে গেল ঠাকুরবাড়িতে অনশন চালাচ্ছি। কয়েক জনের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু এ ক’দিনে কেন্দ্র বা কোনও দলের থেকে কোনও বার্তা পাইনি। অমিত শাহ কলকাতায় এলেও তিনিও কোনও বার্তা দিলেন না। অনশন কর্মসূচিতেও আসেননি কেউ।” এই পরিস্থিতিতে তাঁদের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতেই অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয় বলে জানাচ্ছেন সুব্রত। পুলিশ এসে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’-এর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন শ’দেড়েক মতুয়া। কিন্তু সেই ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ যে কে, তা জানাতে পারেননি পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। সুব্রত নিজেও স্পষ্ট উত্তর দেননি। অবরোধ তুলে নেওয়ার পরে তাঁরা ফের ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে অনশন মঞ্চে বসে পড়েন। এ দিন রেল অবরোধের জেরে আপ ও ডাউন লাইনে দু’টি ট্রেন আটকে পড়ে। সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বাগুইআটির জোড়ামন্দিরে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ অবরোধে বসেন কিছু মতুয়া। পুলিশের সঙ্গে সামান্য ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের। মিনিট কুড়ি পরে পুলিশের হস্তক্ষেপেই অবরোধ ওঠে। সুব্রত বলেন, “যাত্রীদের কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”

সুব্রত জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে এনডিএ আমলে যে নাগরিকত্ব আইন হয়েছিল, তা সংশোধনের দাবিতেই তাঁদের আন্দোলন। বাংলাদেশ থেকে যে উদ্বাস্তুরা এ দেশে নানা সময়ে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব মতুয়ারা। বনগাঁর সাংসদ তথা মতুয়াবাড়ির বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পরে আসন্ন উপনির্বাচনের আগে সেই দাবিতেই আরও জোরদার আন্দোলন শানাতে চাইছেন সুব্রত। যার পিছনে তাঁর ভোটের টিকিট পাওয়ার আকাঙ্খাও আছে বলে মনে করেন অনেকেই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার জানান, মতুয়াদের এই আন্দোলনের প্রতি তাঁরা ‘সংবেদনশীল’। মঙ্গলবার বিজেপির সারা ভারত তফসিলি জাতি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণমূর্তি বান্ডির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে সুব্রতদের সঙ্গে দেখা করবেন। দিনের শেষে জেলা বিজেপি নেতার এই বার্তা ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছনোয় আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে সুব্রতরা।

Advertisement

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সুব্রতর আন্দোলনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, “সুব্রত নিজের স্বার্থে আন্দোলন করছেন। উদ্বাস্তুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের দলের বা সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি। পুরোটাই দিশাহীন ভাবে চলছে। সে জন্যই আমরা কেউ যাচ্ছি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement