তাদের লড়াই কঠিন, তারা জানে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী কেন এ বারের লোকসভা ভোটকে তাঁদের জন্য কঠিন লড়াই বলছেন, সেই প্রশ্ন তুলে শাসক দলকে পাল্টা আক্রমণে গেল সিপিএম। তাদের প্রশ্ন, তা হলে মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কথা বুঝতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
লোকসভা ভোটের প্রচার-কর্মসূচি শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে তৃণমূলের প্রথম কর্মিসভাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সামনে কঠিন লড়াই। সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-কে হারিয়ে জিততে হবে। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে লড়াইয়ের নামার বার্তাও দলের কর্মীদের দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যার প্রেক্ষিতে শাসক দলকে পাল্টা বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তো এক মিনিটে, দু’মিনিটে সব সমস্যার সমাধান করে দিতে অভ্যস্ত! তিনি এখন এই কথা বলছেন!” সুজনবাবুর আরও কটাক্ষ, “শাসক দলের কাজকর্মে মানুষ এখন ভীত। পরিবর্তনের স্লোগান পরিত্রাণের স্লোগানে পরিণত হয়েছে। মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন। সম্ভবত এটা টের পেয়েই উনি বলছেন কঠিন লড়াই!”
তৃণমূল নেত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও। রেলমন্ত্রী মমতার নানা প্রতিশ্রুতি, নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন এবং বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ এই রকম ৭টি বিষয়ে প্রচারের জন্য আলাদা আলাদা পুস্তিকা তৈরি করেছে সিপিএম। আলিমুদ্দিনে এ দিন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে পাশে নিয়ে ওই পুস্তিকাগুলির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেছেন বিমানবাবু। সেই অবসরেই প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, “তৃণমূল বলছে, বামেরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। রাজ্যের ৪২টি আসনেই উনি জিতবেন। রাজ্যের বাইরে ত্রিপুরা, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর থেকেও আসন পাবেন। আবার তারাই বলছে কঠিন লড়াই! দু’টো তো মেলাতে পারছি না!”
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ভোটের আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনও ভাবেই যাতে আত্মসন্তুষ্টি দেখা না দেয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কঠিন লড়াইয়ের কথা বলেছেন দলনেত্রী। সতর্ক করেছেন গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের বিষয়ে। কিন্তু ভোটের মরসুমে স্বভাবতই ওই বার্তাকে ব্যবহার করে তৃণমূলের দিকে প্রশ্ন তোলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি সিপিএম। সাম্প্রতিক নানা নির্বাচনের পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে নিজেদের লড়াই যে কঠিন, সেই ব্যাপারে আলিমুদ্দিন অবশ্য ওয়াকিবহাল। বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো যে সব জেলা থেকে গত বার বামেরা আসন জিতেছিল, সেখানে এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। তার মধ্যে আবার বেশ কিছু আসনে তৃণমূলের তারকা-প্রার্থীরা রয়েছেন। আলিমুদ্দিনে দাঁড়িয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য এ দিন বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় আমাদের আসন বার করা কঠিন। কিন্তু আমাদের উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। শুধু তারকা-প্রার্থী আছেন বলে বাঁকুড়ার মতো আসনে আমরা উড়ে যাব, তা হবে না! আর পঞ্চায়েতের মতো ভোটও এখানে হবে না!”
তবে মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং সুষ্ঠু ভোটের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে, এই কথাও বলছেন বাম নেতারা। পাশাপাশিই তাঁরা জোর দিচ্ছেন গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বাম শিবির ছেড়ে-যাওয়া মানুষজনকে ফিরিয়ে আনার উপরে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “শুধু আমাদের নিশ্চিত ভোটের উপরে আমরা অতীতে জিততাম না। দলের বাইরেও বহু মানুষ সমর্থন করতেন। আমাদের কিছু ভুল এবং আরও নানা কারণে তাঁদের অনেকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এঁদের একটা অংশকে ফেরাতে পারলেও তৃণমূল এ বারের ভোটে স্বস্তিতে থাকতে পারবে না!”
আপাতত লোকসভা কেন্দ্র ধরে ধরে কর্মিসভা করে এই হারানো সমর্থকদের ফেরানোর কথাই বলছেন বাম নেতৃত্ব।