দলের রাজনৈতিক কৌশলের প্রশ্নে সদ্যই প্রবল বিতর্ক হয়েছে দু’জনের। তার রেশ ফুরনোর আগেই এ বার আলাদা আলাদা ভাবে কলকাতায় আসছেন প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যে আলিমুদ্দিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল ইয়েচুুরির পক্ষে, সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছেন কারাট! আর ইয়েচুরি আসছেন সিপিআইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে। যে সিপিআই আবার বৃহত্তর বাম ঐক্যের প্রশ্নে কারাট-লাইনের পক্ষে!
সম্মেলন-পর্ব গতি পাওয়ার আগে আগামী ৫ ও ৬ নভেম্বর আলিমুদ্দিনে বসছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সম্মেলনের রূপরেখা চূড়ান্ত ভাবে ঝালিয়ে নেওয়াই মূলত ওই বৈঠকের লক্ষ্য। বৈঠক শেষ হওয়ার পরে কলকাতায় সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের (অর্থাৎ পৃথক দল হিসাবে সিপিএমের আত্মপ্রকাশের) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান ৬ তারিখ। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাট। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও তিনি থাকবেন।
দলীয় বিতর্কে উল্টো দিকে থাকা ইয়েচুরি আসবেন আরও পরে। ভূপেশ গুপ্তের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান করে বৃহত্তর বাম ঐক্যের সমাবেশ ঘটাতে চাইছেন সিপিআই নেতৃত্ব। যাঁদের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিনের অদূরেই! আগামী ১৮ নভেম্বর মৌলালি যুবকেন্দ্রে ‘ভারতবর্ষের গণতন্ত্র কোন পথে’ শীর্ষক ওই আলোচনাসভায় সিপিআই আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ইয়েচুরিকে। তিনিও সম্মতি জানিয়েছেন। ইয়েচুরির পাশাপাশিই ওই সভায় থাকার কথা প্রবীণ সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন, দলের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন ও এসইউসি-র দুই সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও প্রভাস ঘোষের।
অল্প দিনের ব্যবধানে কলকাতায় আলাদা অনুষ্ঠানে কারাট-ইয়েচুরির বক্তৃতা স্বভাবতই প্রবল কৌতূহল তৈরি করেছে বাম মহলে। বিশেষত, সাম্প্রতিক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে। কারাট-ইয়েচুরি দু’জের কেউই অবশ্য গোটা ঘটনাপ্রবাহকে ব্যক্তিগত লড়াই হিসাবে দেখতে রাজি নন। কারাট বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দলের অন্দরে গণতন্ত্র আছে এবং কোনও বিষয়ে বিতর্ক হওয়াই তাঁদের দস্তুর। এর মধ্যে ব্যক্তিগত কিছু নেই। আবার ইয়েচুরিও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “এটা আমার সঙ্গে প্রকাশের লড়াই, এমন কিছু নয়! দলের রাজনৈতিক লাইন ও সংগঠন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেখানে ত্রুটি খুঁজতে বসে কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করেছি।”
কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কের পরে আপাতত সমঝোতার পথেই নতুন লাইন নির্ধারণের চেষ্টা চলছে সিপিএমে। দলের নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, চার দেওয়ালের আড়াল ছাড়িয়ে শীর্ষ স্তরে বিতর্কের খবর নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিত্বের
সংঘাত’ হিসাবে না দেখে ত্রুটি সংশোধনের প্রক্রিয়া হিসাবেই ব্যাখ্যা করতে চাইছেন তাঁরা। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে অনেকে মনে করছেন, বিজেপি যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন আমরা যেন নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে ব্যস্ত! ব্যপারটা আদৌ তা নয়। এটা শুধুই সুস্থ বিতর্ক। যা আমাদের দলে হয়েই থাকে।”
এরই মধ্যে শুক্রবার আবার বিনয় কোঙারের একটি স্মরণসভায় গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু যে ভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের কথা বলেছেন, তাতে দলেরই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন তা হলে কি বিমানবাবুও প্রাথমিক মত বদলে ইয়েচুরির দিকে ঝুঁকছেন? কারণ, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রধান বিপদ বলে চিহ্নিত করেই রণকৌশল ঠিক কথা বলেছেন ইয়েচুরি।