বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য নিয়ে যে দিন নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বামেরা, সে দিনই আক্রমণের মাত্রা আরও চড়িয়ে দিলেন অনুব্রত মণ্ডল! রামপুরহাটে মঙ্গলবার বামফ্রন্টের নেতাদের ‘পচা আলু’, ‘পশু’-সহ নানা বিশেষণে ভূষিত করেছেন তিনি। একই দিনে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় তৃণমূলের কর্মিসভায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে ‘জোকার’ বলে কটাক্ষ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মন্ত্রী বলেছেন, “সাংবাদিক সম্মেলনে ওঁকে মাঝে মাঝে নাচতে দেখা যায়! ওঁর মানসিক চিকিৎসা হওয়া উচিত। না পারলে আমরাই তার ব্যবস্থা করব।” শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও।
তৃণমূলের এই দুই নেতাই বিরোধীদের উদ্দেশে হুমকি এবং না মন্তব্য করে সাম্প্রতিক কালে বিতর্কে জড়িয়েছেন বারবার। কিন্তু এখন নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় প্রতিপক্ষ সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মন্তব্যে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠছে। শাসক দল সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ করেছে। বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন। আনিসুরের নেতৃত্বে বিধানসভার এস্টিমেট কমিটির বৈঠক করবেন না বলে সই করেও আলোচনা বয়কট করেন তৃণমূল বিধায়কেরা। বামেরা পাল্টা কমিশনের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের সংযত করার জন্য।
অনুব্রতবাবু এর আগে বিরোধীদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে তাদের বিষ দিয়ে মারা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেই মন্তব্যের জেরে অনুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এ দিনই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের তরফে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বামেদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতের ভোটে অনুব্রতবাবু নির্দল প্রার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন। ভোট-পর্বে নির্দল প্রার্থীর বাবা খুনও হন। বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন। এ বার বীরভূমের নেতার নতুন হুমকির বিষয়েও কমিশনের কাছে যাওয়া হবে বলে বামেরা জানিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “হিংসায় উস্কানি দিচ্ছে এই সব মন্তব্য। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও এই সব মন্তব্যকে প্রশ্রয় দিেচ্ছেন!” বামেদের আরও অভিযোগ, ভোটের দিন ঘোষণার পরেই আরামবাগ-সহ বিভিন্ন জায়গায় বামেরা আক্রান্ত হচ্ছে। প্রার্থী এবং দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তার কমিশনকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনী বিধি মেনে সব সরকারি বাড়ি, অফিস ও রাস্তার ধারে বিজ্ঞাপন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বা কাট-আউট সরানোর আর্জিও জানায় বামেরা। রবীন দেবের দাবি, “কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” অতীতে রাজ্যে বিভিন্ন উপনির্বাচনের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও কমিশন কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি এই অভিযোগ তুলে রবীনবাবু বলেন, “কমিশনের উচিত নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা।”
প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়াল লিখন নিয়ে গোলমাল বেধেছে। বারাসতের বামফ্রন্ট প্রার্থী মোর্তাজা হোসেনের এজেন্ট, ফব নেতা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এ দিনই উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান, শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা বিরোধীদের দেওয়াল লিখতে দিচ্ছে না। দেওয়াল দখল হয়ে যাচ্ছে। এই রকম চলতে থাকলে প্রার্থী প্রশাসনের দফতরে ধর্নায় বসবেন বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। এর পরে আজ, বুধবারই দেওয়াল লিখন নিয়ে জেলায় সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে।