ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মনোজ নেগেল। বৃহস্পতিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে প্রথমে তাঁকেই গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে সারদা মামলা থেকে আপাতত অব্যাহতি পেলেন তিনি। মনোজ নেগেল। সারদা গোষ্ঠীর জেনারেল ম্যানেজার।
৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল নেগেলের বিরুদ্ধে। পরবর্তী কালে সবিস্তার তদন্তে অবশ্য সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগসূত্র খুঁজে পায়নি সিবিআই। তাই চার্জশিটেও তাঁর নাম দেননি কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। চার্জশিটে অভিযুক্ত না-হওয়ায় জেল থেকে ছাড়া পেতে মাসখানেক আগে আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন নেগেল। তাঁর সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই-ও। তার ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার তাঁকে সারদা মামলা থেকে আপাতত রেহাই দিলেন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র।
সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত আদালতের বাইরে জানান, নেগেলকে আপাতত মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। পরে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে চার্জশিট দেওয়া হতে পারে। ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল নেগেলকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন জেলে ঘোরানোর পরে গত মাস ছয়েক ধরে তাঁকে রাখা হয়েছে হাওড়া জেলে। তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, এ দিন মামলা থেকে রেহাই পেলেও এখনই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না নেগেল। রাজ্য পুলিশের হাতে থাকা সারদা সংক্রান্ত একটি মামলা এখনও শ্রীরামপুর আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলায় জামিন পেলে তবেই ছাড়া পাবেন নেগেল।
সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সবিস্তার তদন্তের পরেও সিবিআই ওই মামলার সঙ্গে নেগেলের কোনও যোগ খুঁজে পেল না। তা হলে তাঁকে প্রথমেই গ্রেফতার করা হয়েছিল কেন? কেনই বা সারদা সংক্রান্ত ৪৪টি মামলায় তাঁকে জড়িয়েছিল রাজ্য পুলিশ?
অনেকে মনে করছেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে প্রকৃত সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই সারদার জেনারেল ম্যানেজার নেগেলকে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে সারদার অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবেও দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ দিন নেগেল নিজেও আদালতে একই ইঙ্গিত দেন। নিজেকে ‘প্রতারণার শিকার’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, “না জানি, কোথায় কী মামলা করে রেখেছে! জেল থেকে বেরোলেই হয়তো ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা ধরিয়ে দেবে!!’’ তিনি রটনার শিকার বলেও মন্তব্য করেন নেগেল। তাঁর প্রশ্ন, তিনি ডিরেক্টর হলে শ্যামল সেন কমিশন ফ্ল্যাট (সারদা গোষ্ঠীর তৈরি) বিক্রির আগে তাঁকে ডাকল না কেন?
সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মামলায় সাংসদ কুণাল ঘোষ, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও এ দিন আদালতে তোলার কথা ছিল। আইনজীবীরা জানান, কুণাল অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাজির করানো হয়নি। প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার একটি চিঠি দিয়ে আদালতকে বিষয়টি জানান। সেই চিঠিটি মুখবন্ধ খামে না-আসায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আদালত। মামলার গোপনতা রক্ষার জন্য যাবতীয় চিঠি মুখবন্ধ খামে পাঠাতে হবে বলে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুদীপ্ত-দেবযানী-কুণাল, তিন জনকেই ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।