ভুয়ো বিমান বিল কেলেঙ্কারিতে চার্জশিট পেশ করার আগে অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনতে চায় সিবিআই।
সোমবার দিল্লিতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে দেখা করবেন দেবব্রত।
সিবিআই শুক্রবার দেবব্রতর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগ, বিশেষ অফারে মাত্র দু’হাজার টাকায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের টিকিট কেটে ভুয়ো বিল দেখিয়েছিলেন দেবব্রত। সে ভাবেই তিনি রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে এক লক্ষ ২৮ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু দেবব্রতর দাবি, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। সোমবার সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদেরও সে কথাই জানাতে চান তিনি।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের বক্তব্য, পুরোটাই ট্র্যাভেল এজেন্টদের জালিয়াতি। ট্র্যাভেল এজেন্টরাই বিশেষ অফারে কম দামের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা বেশি দামের বিল ধরান। দেবব্রতর তরফে সেই বিলই রাজ্যসভায় জমা দেওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে ওই পরিমাণ টাকা যে দেবব্রতবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই গিয়েছে, তার সমস্ত নথি ও প্রমাণ রয়েছে। যে ভুয়ো বিল জমা পড়েছে, সেখানেও দেবব্রতর সই রয়েছে। কাজেই আইনত দেবব্রত এর দায় এড়াতে পারেন না। দিল্লির আদালতে মামলা চলাকালীন সেই সব তথ্যপ্রমাণই জমা পড়বে। তবে চার্জশিট পেশ করার আগে দেবব্রতর বক্তব্য শুনতে চায় সিবিআই। রাজ্যসভার আরও যে পাঁচ জন সাংসদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বক্তব্যও শোনা হবে।
সিবিআই সূত্রের খবর, দেবব্রতবাবুর তরফে চার বার ভুয়ো বিল রাজ্যসভার সচিবালয়ে জমা পড়েছে। চার বারই টিকিট কাটা হয়েছিল দিল্লির গ্রিন পার্কের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে। শুক্রবার ওই ট্রাভেল এজেন্সির দফতরেও হানা দিয়েছে সিবিআই। সেখান থেকেও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দেবব্রতর বক্তব্য শোনার পরে সিবিআই খতিয়ে দেখবে, ট্র্যাভেল এজেন্সির তরফে ভুয়ো বিল তৈরি হয়েছে, নাকি দেবব্রতকে না জানিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ এই কাজ করেছে। যদি দেবব্রত দেখাতে পারেন, রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত টাকার পুরোটাই তিনি ট্র্যাভেল এজেন্সিকে টিকিটের দাম বাবদ মিটিয়ে দিয়েছেন, তা হলে তাঁর পক্ষে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা সহজ হবে।
সাধারণত সাংসদদের ব্যক্তিগত সহায়করাই তাঁদের হয়ে বিমানের টিকিট কেনার কাজটি করেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, তাঁরাও এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে এমন বিমান টিকিটের বিল দেখানো হয়েছে, যে টিকিটে কেউ যানইনি। টিকিট কেটেও পরে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্যসভার সচিবালয়ে বিল জমা পড়েছে। ব্যক্তিগত সহায়করা এর মধ্যে জড়িত না থাকলে তা সম্ভব নয় বলে সিবিআই কর্তাদের দাবি।
অবসরপ্রাপ্ত আমলা তথা প্রবীণ সাংসদ দেবব্রত মাত্র এক লক্ষ ২৮ হাজার টাকার জন্য ভুয়ো বিল বানাতে পারেন, তৃণমূলের কোনও নেতাই তা মানতে রাজি নন। তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে দেবব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলেন। শনিবার রাতেই দেবব্রত দিল্লি পৌঁছে গেলেও সেই নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। কলকাতায় দেবব্রতর বাড়িতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তিনি দিল্লিতে। আবার দিল্লির বাড়িতে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, তিনি কলকাতায়।