মুখ্যমন্ত্রীকে পাগড়ি পরিয়ে অভ্যর্থনা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আচরণবিধির গেরোয় তাঁর হাতে নাকি এখন কাজ নেই! এই সুযোগে অধুনা বঙ্গবাসী রাজস্থানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জনসংযোগের কাজ সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে দলের কর্মিসভা শেষ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাঝেরহাটে বাংলার মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী কূলের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সব সম্প্রদায়ের এক হয়ে বাংলার উন্নয়নে কাজ করার কথাই সেখানে বলেছেন মমতা। তবে বক্তব্য ছাপিয়েও এ দিনের ওই অনুষ্ঠানে তাঁর অনুচ্চারিত বার্তাই ছিল স্পষ্ট ‘আমি তোমাদেরই’!
লোকসভা ভোটের আগে গত বার তৃণমূল নেত্রী হিসেবে মমতাকে এই শহরের গুজরাতি বাসিন্দাদের সঙ্গে ‘সৌজন্যমূলক’ বৈঠকে দেখা গিয়েছে। আড্ডার মেজাজে, মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক কথাবার্তায় আপাত ভাবে হোলির রঙিন আবেশের ছোঁয়া ছিল এ দিনের অনুষ্ঠান ঘিরে। তবে মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাসের মতো তাঁর সরকারের তিন মন্ত্রীকে নিয়ে এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, আমরিতে অগ্নি-কাণ্ডের পরে রাজ্যের অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তৃণমূল-সরকারের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য দু’পক্ষের সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের আলাপচারিতার আরও একটি দিক রয়েছে। অনেকেরই ধারণা, এই অবাঙালি ব্যবসায়ীদের ভোটের একটা বড় অংশ যায় বিজেপির বাক্সে। এ বার ভোটে নরেন্দ্র মোদী হাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেই ভোটকে তৃণমূলের দিকে টানতে হোলির মোড়কে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের আসরকে সে কারণেই অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বস্তুত, উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত বড়বাজার। সেখানকার অবাঙালি ব্যবসায়ীদের বড় অংশই ছিলেন এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। আমন্ত্রিত হলেও জরুরি কাজে আটকে গিয়ে আসতে পারেননি উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীকে নিয়ে প্রচারের আতিশয্যে তিনি যে বিরক্ত, তা অবশ্য এই অনুষ্ঠানে আসার আগেই পৈলানে কর্মিসভায় বলেছিলেন মমতা। তাঁর কথায়, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগেই, অনেকেই নমো নমো করতে শুরু করেছে! এমন একটা ভাব করছে, যেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছে! বিজেপি এত আসন পাবে কোথা থেকে? বাংলা থেকে তো নয়ই! অন্য রাজ্য থেকেও পাবে না। অথচ ‘ক্ষমতায় আসছি’ বলে সকাল থেকে জল-বাতাসা খেয়ে নেমে পড়েছে!” এ দিন তিনি ফের বলেন, “ফেডেরাল ফ্রন্টই ভারতের রাজনীতি চালাবে।”
পৈলানের কর্মিসভার অব্যবহিত পরেই মাঝেরহাটের অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন অন্য মেজাজে। সেখানে সরাসরি ভোটের কথা বলার কথাও ছিল না। তার মধ্যেই অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করতে চেয়েছেন মমতা। রাজস্থানের গোলাপি শহর জয়পুরকে দেখেই কলকাতাকে আসমানি নীলে রাঙিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আসে। অকপটে সে কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে হর্য নেওটিয়া, মহেন্দ্র জালান, সন্তোষ রুংতা-সহ উপস্থিত শ্রোতাদের সিংহ ভাগই ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁদের উদ্দেশে নির্বাচনী বিধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঈষৎ তির্যক মন্তব্য, “আপনারা ব্যবসা থেকে ক্রমাগত ছুটি নিলে ব্যবসা চলবে? পাঁচ বছরের সরকারের মেয়াদে তো পঞ্চায়েত ভোট থেকে শুরু করে লোকসভা, পুরভোট, বিধানসভার ভোটের আচরণ-বিধিতেই দেড় বছর চলে যাচ্ছে! ফলে কাজটা হবে কী করে!”
সরকারি কাজ নেই বলেই তিনি এ দিন সময় কাটাতে চলে এসেছেন বলে সহাস্যেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ‘আন্তর্জাতিক মারোয়াড়ি ফেডারেশনে’র সভাপতি দীনেশ বজাজ ‘দিল্লিতে দিদির সাফল্য’ কামনা করেছেন। দীনেশের কথায়, “আমাদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল ২২ তারিখ। কিন্তু দিদি প্রচারে বেরোবেন বলে দু’দিনের নোটিশেই অনুষ্ঠান করে দিলাম। দিদিও উপভোগ করলেন। আমরাও!” আলাপচারিতার মধ্যেও মমতা রাজস্থান ও বাংলার মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার আবেদন জানাতে ভোলেননি। বলেছেন, “রাজস্থানের ভাল ভাল জিনিস এখানে নিয়ে আসুন। বাংলার ভাল ভাল কাজ রাজস্থানে নিয়ে যান। কারণ হম সব এক হ্যায়!”