মালবাজার থানার সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে রয়েছে রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালার দেহ। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
দাবি আদায়ে শ্রমিকদের জঙ্গি আন্দোলন চা-বাগানে নতুন কোনও ঘটনা নয়। ষাট ও সত্তরের দশকের সেই ট্রাডিশন চা-শিল্পে মন্দার জেরে কিছুটা ধাক্কা খায় পরবর্তী তিন দশকে। কিন্তু আট মাস আগে বাগানের এক চৌকিদারের হাতে দলমোড় চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার খুন হওয়ার ঘটনা ফের সেই রক্তাক্ত স্মৃতি উস্কে দিয়েছিল চা-শিল্প মহলে। আর শনিবার শ্রমিকদের হাতে বাগান মালিক খুনের ঘটনায় নতুন করে একই অস্বস্তি ছড়িয়েছে ডুয়ার্সে। গত চার বছর ধরে ফের একটু-একটু করে বাজার ফিরে পাচ্ছে ডুয়ার্সের চা। সেই প্রেক্ষিতেই এই ঘটনা আরও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা একাধিক মহলের। ঘটনার প্রভাবে ডুয়ার্সের অন্য চা বাগানগুলির স্বাভাবিক কর্ম-সংস্কৃতি নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মালিক পক্ষ।
‘ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিত্ দাশগুপ্ত বলেছেন, “ওই বাগানে পাওনা নিয়ে বিবাদ চলছিল বলে জানতে পেরেছি। তবে তাই বলে এক জন মালিককে খুন করার ঘটনা মানা যায় না। এর ফলে যে সমস্ত বাগান সুষ্ঠু ভাবে চলছে সেগুলিতে কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হবে। কর্তৃপক্ষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে।”
ম্যানেজার বা মালিকের উপর আক্রমণ এবং খুন করার মত ঘটনা রুখতে ইউনিয়নগুলির আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন মালিক পক্ষ। ‘ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর মন্তব্য, “এই ঘটনা প্রমাণ করে বাগান কর্তৃপক্ষ কতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে কাজ করছে।” ঘটনা নিয়ে খোঁজ নেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। প্রশাসনের কর্তারা বাগানে গিয়েছেন। দেখতে হবে, ঘটনার পিছনে কোনও উস্কানি আছে কি না।”
দীর্ঘদিন থেকে সোনালি চা বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ছিল না বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, গত অক্টোবর মাস থেকে শ্রমিকদের বেতনও অনিয়মিত হয়ে পড়ছিল বলে জানা গিয়েছে। গত এক মাস ধরে পনেরো দিন অন্তর যে মজুরি মেলার কথা তা পাচ্ছিলেন না শ্রমিকেরা। তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল। খোদ বাগানের মালিক গত পাঁচ দিন ধরে বাগানে ছিলেন। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, শনিবার পাওনা মেটানোর কথা বলা হলেও টাকা না পেয়ে শ্রমিকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বাগান মালিক পক্ষের পাশাপাশি ওই ঘটনা নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন শ্রমিক সংগঠনগুলিও। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী দোলা সেন বলেছেন, “ঘটনাটা অত্যন্ত নিন্দাজনক। আমরা এ ধরনের ঘটনা কোনও ভাবে সমর্থন করি না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তির পক্ষে।”
সিটু নিয়ন্ত্রিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক জিয়াউল আলমের দাবি, “শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে কখনও বাগান মালিক নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ওই ঘটনা দুঃখজনক। আরএসপি-প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস বলেন, “এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সকলকে সচেতন করা দরকার।”