ঝাড়খণ্ড থেকে হারিয়ে যাওয়া রাম সোরেনকে তাঁর দাদার হাতে তুলে দিচ্ছেন বহরমপুরের ঝর্না দাশগুপ্ত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ডিসেম্বরও বুঝি কখনও কখনও সমুদ্দুর হয়ে যায়!
বছর দুয়েক আগের এক ডিসেম্বরে তিনি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিলেন। ‘পথভোলা এক পথিক’ হয়ে চলে এসেছিলেন বহরমপুরে। ফের সেই ডিসেম্বরেই তাঁর মনে পড়ে গেল সব— পরিবার, পরিজন, বাড়ি, ছাদ, উঠোন, এমনকি মোবাইল নম্বরও!
সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে দিলেন বহরমপুরের দাশগুপ্ত দম্পতি। ঝাড়খণ্ডের সরাইকেল্লার রাম সোরেনও বাসে ওঠার আগে জানিয়ে গিয়েছেন, এ বার আর ভুল করে নয়, পথ চিনেই তিনি চলে আসবেন ‘দিদি’র বাড়ি।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পথ ভুলে বহরমপুরে চলে আসেন বছর বাইশের রাম সোরেন। কিছু জানতে চাইলে তিনি একটাই উত্তর দিতেন, ‘আমার নাম রাম সিং।’ ব্যস, ওইটুকুই! রাস্তার পাশের হোটেল থেকে তাঁর খাওয়া জুটে যেত। আর তিনি পাল্লা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে যান নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাঝেমধ্যে হোটেল ও মিষ্টির দোকানে টুকিটাকি কাজ করতেন।
গির্জার মোড়ে রাস্তার ধারেই ছিল ঝর্না দাশগুপ্তের ভাতের হোটেল। রামের সব চেয়ে বেশি আবদার ছিল ঝর্নাদিদির কাছে। আর ঝর্নাও তাঁকে দেখতেন নিজের ভাইয়ের মতো। তিন বেলা তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করতেন। পরে ঝর্না ওই হোটেল বন্ধ করে দেন। ঝর্না আর তাঁর স্বামী সত্যজিৎ স্থানীয় পুলিশকে বলে রামকে নিয়ে যান নিজেদের বাড়ি। তার পরে তাঁর চিকিৎসাও করান তাঁরা। চিকিৎসায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন রাম।
এ দিকে স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে রামের কাজেরও ব্যবস্থা করে দেন ঝর্না। ঝর্না বলেন, ‘‘২৫ ডিসেম্বর ছুটতে ছুটতে বাড়ি চলে আসে রাম। তার পরে গড়গড় করে বলতে শুরু করে ঠিকানা, বাড়ির লোকজনের কথা আর মোবাইল নম্বরও।’’
সেই নম্বরে ফোন করতেই ফোন ধরেন রামের দাদা পাতার সোরেন। তিনি জানান, রাম দু’বছর ধরে নিখোঁজ। বুধবার পাতার নিজেই নিতে আসেন ভাইকে। চোখের জল মুছে ঝর্না বলেন, ‘‘রাম ঘর ফিরে পেল। এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে!’’ আর সত্যজিৎ রামকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছেন, ‘‘মাঝেমধ্যে ফোন করিস কিন্তু।’’