জগদীশপুরে রাতপাহারায় ‘গুলাব গ্যাং’

সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১২টা— টহল দেন ওঁরা। কটু গন্ধ নাকে এলেই সপাসপ নেমে আসে লাঠি, ঝাঁটা। ‘চোলাই-ভূতে’র বংশ নির্মূল করাই লক্ষ্য। গত চার মাস ধরে এমনই চলছে উলুবেড়িয়ার জগদীশপুর গ্রামে। উত্তরপ্রদেশের ‘গুলাব গ্যাং’-এর আদলে সেখানে তৈরি হয়েছে প্রমীলা বাহিনী।

Advertisement

সুব্রত জানা

রাজাপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪২
Share:

জগদীশপুরের প্রমীলা বাহিনী। নিজস্ব চিত্র

সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১২টা— টহল দেন ওঁরা। কটু গন্ধ নাকে এলেই সপাসপ নেমে আসে লাঠি, ঝাঁটা। ‘চোলাই-ভূতে’র বংশ নির্মূল করাই লক্ষ্য। গত চার মাস ধরে এমনই চলছে উলুবেড়িয়ার জগদীশপুর গ্রামে। উত্তরপ্রদেশের ‘গুলাব গ্যাং’-এর আদলে সেখানে তৈরি হয়েছে প্রমীলা বাহিনী।

Advertisement

অনেকগুলি প্রাণের বিনিময়ে এমন চেহারা পেয়েছে গ্রাম। তিন বছর আগে বিষমদে মারা গিয়েছিলেন গৌরী দলুইয়ের স্বামী। মাস পাঁচেক আগে গৌরীর ১৭ বছরের ছেলে নিমাইও গিয়েছে চোলাইয়ের টানে। আর তার পরই ফুঁসে উঠেছেন মহিলারা। শুধু নিমাই নয়। ছ’মাস আগে মারা গিয়েছেন শিবানী হাজরার স্বামী রণজিৎ হাজরা, সাত মাস আগে লখাই দাস, বাপন হাজরা। বছর খানেক আগে নন্দবালা দলুইয়ের স্বামী স্বপন দলুই। তারও কয়েক মাস আগে সঞ্জয় মণ্ডল, মহাদেব বয়াল— গত তিন বছরে মৃত্যু মিছিলে ১৩ জন।

নিম্নবিত্ত পরিবারের এই মহিলারা পরিচারিকার কাজ করেন, কেউ আনাজ বেচেন। কারও ঘরে শিশু রয়েছে, কারও বৃদ্ধা শাশুড়ি। সব সামলে পাহারাদারি। নন্দবালা বলেন, ‘‘আগেও অনেক বার ঠেক ভেঙেছি। পুলিশি অভিযানে কয়েক দিন চুপচাপ থাকে। ফের শুরু হয় কারবার।’’

Advertisement

এ বার অনেক বেশি তৎপর তাঁরা। যাঁরা পাহারা দিতে সক্ষম, তাঁদের নাম তোলা হয় খাতায়। ৮-১০ জনের এক একটি দল পালা করে রাত জাগে। তার জেরে দুষ্কর্মের ধুম অনেকটাই কমেছে বলে দাবি বাহিনীর সদস্য মাধুরী মল্লিকের। তাঁর কথায়, ‘‘এই তো সে দিন দুই যুবক মদ খেয়ে এক তরুণীর ওড়না ধরে টান দিয়েছিল। আমাদের তাড়া খেয়ে পালাল।’’ মদ্যপ স্বামীর হাতে মার খাওয়াও ‘অভ্যাস’ গ্রামের মহিলাদের। সেখানেও ত্রাতা হয়ে উঠছে ‘গুলাব গ্যাং’। মাধুরী বলেন, ‘‘নেশার ঘোরে ভাতের থালা ছুড়ে দেয় স্বামী। অনেক সহ্য করেছি। আর নয়।’’

রাজাপুর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গ্রাম। ফলে অস্বস্তিতে পুলিশও। হাওড়া গ্রামীণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর যদিও দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের তরফেই প্রতিরোধ বাহিনী রয়েছে। মহিলারাও রয়েছেন। বেআইনি কাজ দেখলে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।’’ মহিলারা অবশ্য সে দাবি অস্বীকার করেছেন। গৌরী দলুই বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে টর্চ, খাতা কিনেছি। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু খুব লাভ হয় না।’’ উলুবেড়িয়া থানা প্রতিরোধ বাহিনীর সভাপতি সমর মান্নাও স্বীকার করেছেন, প্রমীলা বাহিনী নিজে থেকেই কাজ করছে। তাঁর আশ্বাস, তাঁরা পাশে রয়েছেন।

গ্রাম পাহারায় শুধু মহিলারাই কেন? স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘এলাকার পুরুষেরা বেশির ভাগই মদে আসক্ত। ভাঁটি ভাঙার সাহস আমাদের নেই।’’ এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অরুণ মালিকও বলেন, ‘‘পুরুষেরা সকলেই চোলাই খায়। ফলে ভরসা মহিলারাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement