Tapas Roy vs Sudip Banerjee

তৃণমূলে লড়াই: অভিনয় করলে দাদাসাহেব ফালকে পেতেন সুদীপ, এ বার প্রবীণ তাপস বিঁধলেন প্রবীণকেই!

নবীন-প্রবীণ বিতর্কে এক প্রবীণ নেতা বিঁধলেন আরও এক প্রবীণ নেতাকে। লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রবীণ নেতা তাপস রায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২০
Share:

(বাঁ দিকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস রায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূলের অন্দরে লড়াই থামার লক্ষণ নেই! সোমবারের পর মঙ্গলবারও শাসকদলের নেতারা জড়ালেন বিবৃতির যুদ্ধে। সেই অধ্যায়েই নবীন-প্রবীণ বিতর্ককে নতুন দিশা দিয়ে দলের এক প্রবীণ নেতা বিঁধলেন আরও এক প্রবীণ নেতাকে। লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রবীণ নেতা তাপস রায়। মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূলের অভ্যন্তরে যা চলছে সেটা কি আসলে নাটক? রাজ্যের অন্যান্য ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই শাসকদল এমন কৌশল নিয়েছে? জবাবে তাপস বলেন, ‘‘আমি বলতে পারব না যে এটা নাটক না অ-নাটক। তবে এটুকু বলতে পারি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যদি রাজনীতি না করে অভিনয় করতেন, তা হলে তাঁর দাদাসাহেব ফালকে রাখা ছিল এবং অস্কার পেতেন কি না জানি না। তবে অস্কারে তার নাম বিবেচিত হত।’’ উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে সুদীপ বনাম তাপসের লড়াই কোনও নতুন বিষয় নয়। এর আগেও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তাঁরা। গত বছর তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল এই দুই নেতার। এ বার নবীন-প্রবীণ বিতর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে দলের বর্ষীয়ান সাংসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাপস।

Advertisement

সোমবার ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের এক অনুষ্ঠানে উত্তর কলকাতার সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘এই যে এত বড় ভারতবর্ষ। ২৯টা রাজ্য ১৪০ কোটির দেশ। এই দেশে যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে আলোচনায় বাংলাকে সবসময় প্রথম সারিতে রাখতে হয়। তার কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আছেন বলেই এত আলোচনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না, সেদিন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে।’’ সেই প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে তাপস বলেছেন, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন জাতীয় নেতা থাকতে এটা হবে কেন? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। কেন তিনি এ কথা বললেন? তা হলে কি তাঁর বিলম্বিত বোধোদয় হয়েছে? কারণ মাঝখানে তো ৬-৭ বছর তিনি দলে ছিলেন না। সেই সময় তিনি এ কথা উপলব্ধি করেননি তা হলে! পরে তিনি এই বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই ২০০৯ সালে দলে ফিরেছিলেন। তিনি তো বলেছিলেন এই দলটাই আর ছ’বছর থাকবে না। ওঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে দলের বিরুদ্ধে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলেছিলেন। সেই সব কাগজপত্র এখনও আমাদের কাছে আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। বালাই ষাট! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন না কেন? উনি নিজেই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ১০-১২ বছরের বড়। উনি এ কথা বলেন কী করে? আমাদের সকলের আয়ু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন। তিনি থাকুন এবং আমাদের নেতৃত্ব দিন। উনি যে কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে ওঁর সেই হাল হতে পারে।’’

সুদীপের মন্তব্যের নিন্দা করে তাপস বলেছেন, ‘‘আসলে ওঁরা পরিশ্রম করেননি, সংগঠন করেননি, গা ঘামাননি।‌ ওঁরা অলস, ওঁরা কুঁড়ে। ওঁরা চাটুকারিতা ও স্তাবকতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। যতদিন রাজনীতি করছেন, ততদিন। সেই জন্যই এই সমস্ত কথা বেরিয়ে যায়। এই সমস্ত কথা তো বলার কথা নয়, বলা উচিত নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বুক জুড়ে থাকবেন, যুগ যুগ ধরে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ কথা আমাদের ছোটদেরও বলার কথা নয়। আমরা যারা সমবয়সি বা বয়সে ছোট তাঁরা সবাই চান আমাদের আয়ু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘায়ু হোন, সুস্থ থাকুন। বাংলাকে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায থেকে এ সব বলেছেন। ওঁরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন, কী বলতে কী বলছেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। আশা করব এরপর উনি কথা কম বলবেন এবং কথা বললেও সেই শব্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’’

Advertisement

আগামী দিনে সুদীপ উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের প্রার্থী হলে তিনি যে নিজেকে সরিয়েই রাখবেন তা-ও নিজের মন্তব্যের মারফত বুঝিয়ে দিয়েছেন তাপস। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি উত্তর কলকাতা লোকসভা নির্বাচনে দলের কাজ করেছি। বর্তমানে আমি যে জেলা সভাপতি সেখানে দু’টি লোকসভার আসন রয়েছে, তাই আমাকে সেখানে কাজ করতে হবে। সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনাতেও দায়িত্ব দিয়েছেন যেখানে মোট পাঁচটি আসন রয়েছে। তাই আমার ভাবনা চিন্তায এখন আর সেদিকে নেই আর উনি দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন না, তা নিয়েও আমার কোনও ভাবনা চিন্তা নেই।’’

তবে দলের নবীন-প্রবীণ বিতর্ক নিয়ে নিজের মতামত স্পষ্ট জানিয়েছেন তৃণমূলের এই প্রবীণ বিধায়ক। তিনি বলেছেন, ‘‘অভিষেক নেতৃত্বে ছিল, আছে, থাকবে। অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ। আমি মনে করি আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা যারা তৃণমূল কংগ্রেস করতে এসেছি নবীন এবং প্রবীণ সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই তৃণমূলে এসেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দলের প্রবীণ নেতা হিসেবেও আমি বলছি, আজকের বাংলা রাজনীতিতে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম যে সমস্ত বিরোধী দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে লড়াই করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব অপরিহার্য।’’ প্রসঙ্গত, গত শনিবার কালীঘাটে যে কয়েকজন নেতাকে ডেকে অভিষেক বৈঠক করে নিজের আগামী পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রবীণ ব্রিগেডের নেতা তাপস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement