প্রতীকী ছবি।
আগামী চার বছরের মধ্যে কলকাতা-সহ ১০২টি শহরের দূষণের পরিমাণ কমানোর জন্য গত বছরই ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ চালু করেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) পরিমাণ বর্তমানের থেকে ২০-৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে সেখানে। সম্প্রতি মন্ত্রক প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সেটা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিজ’ (যে সব শহরের বাতাসের মান ধারাবাহিক ভাবে খারাপ)-এর পাশাপাশি দেশের ১০০টি শিল্পাঞ্চল কতটা দূষিত, তার জন্য ‘কম্প্রিহেনসিভ এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন ইনডেক্স’ (সিইপিআই)-এর মূল্যায়ন করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেখানে দূষিত শিল্পাঞ্চলকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে— ‘ক্রিটিক্যালি পলিউটেড এরিয়া’ (সিপিএ) এবং ‘সিভিয়ারলি পলিউটেড এরিয়া’ (এসপিএ)। এসপিএ-এর মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জায়গা রয়েছে। সেগুলি হল হাওড়া, দুর্গাপুর এবং ব্যান্ডেল। এমনিতে হাওড়ার দূষণ নিয়ে সব সময়েই চর্চা চলে। সেখানকার দূষণ যে মাত্রাতিরিক্ত, তা একাধিক বার ধরা পড়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যেও। করোনা সংক্রমণ চলাকালীন লকডাউন থাকায় বা রাস্তায় যানবাহন কম থাকার কারণে হয়তো কিছু দিন দূষণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু তা নিছকই ব্যতিক্রম বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
চলতি সপ্তাহেই কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ নিয়ে মামলা ছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। সেখানে রাজ্য সরকার দূষণ রোধে এখনও পর্যন্ত কী কী করেছে, তার রিপোর্ট আগামী ছ’সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে আদালতের তরফে। যদিও ঘটনাক্রম বলছে, বায়ুদূষণের এই মামলা বহু বছর ধরে চলছে। আগে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা চলেছিল। পরে জাতীয় পরিবেশ আদালত তৈরি হলে সেখানে নতুন করে তা শুরু হয়। বায়ুদূষণ রোধের জন্য ২০১৫ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। সেই কমিটি একাধিক সুপারিশও করে। মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘২০১৬ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। ২০১৭-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু তার পরেও যে কিছুই হয়নি, সেটা দূষণের তথ্য দেখলেই বোঝা যাবে।’’ আর এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে দূষণ কমবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে হইচইয়ের কিছু নেই। বরং দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাস্তবে কোথায় দাঁড়িয়ে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা দরকার।’’