সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রাজভবনে সি ভি আনন্দ বোসের দিন কি ফুরিয়ে আসছে! প্রশাসনিক মহলে জল্পনা অন্তত তেমনই। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন বোসের ‘ব্যক্তিগত আচরণ’ নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা কাঙ্খিত নয় বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে রাজ্যপাল যখনই কঠোর ভূমিকা নিতে যাচ্ছেন, তখনই শাসক দল তাঁর ‘কর্মকাণ্ড’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তাঁকে কোণঠাসা করে ফেলছে। এই ‘বিড়ম্বনা’ কাটাতে গেলে রাজ্যপালের পদে বদল আনা ছাড়া উপায় নেই বলেই প্রশাসনিক সূত্রের একাংশের বক্তব্য। তবে বোস সত্যিই সরে গেলে বাংলার নতুন রাজ্যপাল কে হতে পারেন, সে সব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আবার রাজ্যপাল পদের ‘রক্ষাকবচ’ ধরে রাখতে বোসের তরফেও পাল্টা প্রয়াস জারি রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
রাজ্যপাল বোস আপাতত দিল্লিতে। চোপড়া যাবেন বলে এক বেলার জন্য শিলিগুড়ি এসেও আবার দিল্লি ফিরে গিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথ আটকে রয়েছে। রাজ্যপাল বোস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। রাজভবনের এক মহিলা কর্মী (যিনি বুধবারই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন, চেয়েছেন নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ) রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরে মহিলারা ওই বাড়িতে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এমনই মন্তব্য করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের তরফে। সেই অভিযোগের পরে রাজ্যপাল রাজভবন চত্বরে পুলিশের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, তিনি আপাতত রাজভবনে যাবেন না। রাজভবনকে ঘিরে এই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব।
প্রাক্তন আইএএস বোস ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’ দেখতে একটি সংগঠনের তরফে বাংলায় এসেছিলেন। তার পরে তাঁকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাংলায় ‘হাতেখড়ি’ নিয়ে শুরুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘মধুর’ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তাঁর ওই ভূমিকা ভাল নজরে নেয়নি। পরেও নানা ঘটনায় রাজ্যপালের ভূমিকা সম্পর্কে অসন্তোষ শোনা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়। আবার কালক্রমে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের সঙ্গেও রাজ্যপালের সংঘাত বেধেছে। প্রশাসনিক একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘শাসক ও বিরোধী, কোনও পক্ষই রাজ্যপালের ভূমিকা পছন্দ করছে না। সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনেও অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।’’ ওই সূত্রের মতে, এই ‘অচলাবস্থা’ কাটাতেই রাজ্যপাল বদলের ভাবনা।
রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি বাংলায় রাজ্যপাল পদে জগদীপ ধনখড়ের মতো কাউকে চায়। যিনি আইন এবং সংবিধানের প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে ‘কড়া নিয়ন্ত্রণে’ রাখবেন কিন্তু অযথা ‘ব্যক্তিগত বিতর্কে’ জড়াবেন না। বল এখন দিল্লির কোর্টে!