প্রতীকী ছবি।
ট্রেন দেরি করে চলার ক্ষেত্রে যেন শিয়ালদহের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে হাওড়া ডিভিশন। রেল মন্ত্রী থেকে বোর্ড আমলা, যে যাই বলুন না কেন, পূর্ব রেলের এই দুই ডিভিশনের কর্তাদের ওই রোগ সারানো নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই নেই। ফলে রোজই সকাল-সন্ধ্যা লোকাল ট্রেনগুলি দেরিতেই চলছে। আর চূড়ান্ত ভুগছেন যাত্রীরা।
গত কয়েক বছর ধরে লোকাল ট্রেন দেরিতে চলার ব্যাপারে শিয়ালদহ ডিভিশনের যাত্রীদের অভিযোগের কথাই শুনে এসেছেন সবাই। কিন্তু এ বার নিয়মিত ট্রেন দেরি করে চলার অভিযোগের খাতায় যুক্ত হল হাওড়া ডিভিশনের নামও। যাত্রীদের বক্তব্য, গত ৭-৮ মাস ধরে সারা দিন ধরেই সব ট্রেন গড়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট দেরি করে চলছে। আর ট্রেন দেরি করে চলার ফলে কিছু কিছু ট্রেনে ভিড়ের ঠেলায় প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে যাত্রীদের। শুধু যাতায়াতের দুর্ভোগই নয়, অফিস এবং অন্যান্য কাজকমের্র জন্য কলকাতায় যাতায়াত করা যাত্রীদের নিত্যই গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, মেন লাইনের শেওড়াফুলি, তারকেশ্বর, ব্যান্ডেল, বর্ধমান লোকাল ট্রেনগুলি সব সময়ই হাওড়ায় ঢুকছে প্রায় ১০-থেকে ১৫ মিনিট দেরিতে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেটি ফিরতি পথে ছাড়ছেও দেরি করে। আর তাতেই গন্তব্যে পৌঁছতে গড়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত দেরি হয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের।
যাত্রীদের আরও বক্তব্য, নিত্য দিন ট্রেনগুলি দেরি করলেও রেল কর্তৃপক্ষ এই দেরির কারণ নিয়ে কোনও ঘোষণা করেন না। স্টেশনের মাইকে মাঝে মধ্যে বলা হয়, ‘‘ডাউন ট্রেন দেরিতে আসার জন্য আপ ট্রেনগুলি ছাড়তে দেরি হচ্ছে’’। কিন্তু কেন রোজই ডাউন ট্রেন দেরি করে আসছে কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না হাওড়া স্টেশন কর্তৃপক্ষ। শুধু মেন লাইনেই নয়, দেরি করছে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের লোকাল ট্রেনগুলিও। বারবার বলা সত্ত্বেও রেল কর্তাদের টনক নড়ানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের।
এত দিন ধরে ঠিকঠাক চললেও হঠাৎ কয়েক মাস ধরে কেন এই দেরি?
রেল কর্তাদের একাংশ বলছেন, হাওড়া স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি রোজই নির্ধারিত সময়ের পরে আসছে। যাত্রীদের নামিয়ে, ট্রেন খালি করে ফের কারশেডে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আরও সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে কখনও কখনও সব প্ল্যাটফর্মেই দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকছে। সেখানে লোকাল ট্রেনের জন্য জায়গাই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কারশেডে অপেক্ষা করতে গিয়ে দেরি হচ্ছে লোকাল ট্রেনের।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র যাত্রীদের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, পূর্ব-মধ্য রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা পাল্টানোর কাজ চলায় দূরপাল্লার ট্রেনের দেরি হচ্ছে। আর সেই দেরির প্রভাবে লোকাল ট্রেনও দেরি করছে।
রেল কর্তাদের একাংশের ওই ব্যাখ্যা মানতে চাইছেন না যাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, দূরপাল্লার ট্রেন দেরিতে আসার দায় রেল কর্তৃপক্ষের। ফলে কী করে তাড়াতাড়ি হাওড়ার প্ল্যাটফর্ম খালি করা হবে, তার ব্যবস্থাও করতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকেই। যাত্রীদের অভিযোগ, ডিভিশনের কর্তারা কেউ বিষয়টি দেখভাল করছেন না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।