ভাঁড়ারে অস্ত্র, তবু পিছিয়ে বাম-কংগ্রেস

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মমতার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো বহু বিষয় হাতের কাছে মজুত। শিল্পের বেহাল দশা, শিক্ষায় নৈরাজ্য থেকে স্বাস্থ্যে লণ্ডভণ্ড অবস্থা— সাধারণ মানুষের সমস্যা বিস্তর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

ফাইল চিত্র।

পুজোর ছুটি শেষ। কাজে ফিরছেন মানুষ। তৎপরতা ফিরছে রাজ্য রাজনীতিতেও। আগামী সপ্তাহেই জেলা সফরে বেরোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি মাথায় রেখে জেলায় জেলায় যাওয়া শুরু করছেন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইদানীং রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের প্রবল প্রতিপক্ষ বিজেপি-ও নেমে পড়েছে ময়দানে। দিলীপ ঘোষেরা চলে গিয়েছেন পাহাড়ে। কখনও আরএসএসের মোহন ভাগবত, কৃষ্ণগোপাল তো কখনও বিজেপি-র শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়েরা এসে সরগরম রাখছেন গেরুয়া শিবিরকে। কিন্তু অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেসের ঘুম ভাঙবে কবে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে!

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মমতার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো বহু বিষয় হাতের কাছে মজুত। শিল্পের বেহাল দশা, শিক্ষায় নৈরাজ্য থেকে স্বাস্থ্যে লণ্ডভণ্ড অবস্থা— সাধারণ মানুষের সমস্যা বিস্তর। কিন্তু মানুষের মনে দাগ কাটার মতো কোনও আন্দোলন তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাম ও কংগ্রেস। মাঝেমধ্যে নবান্ন বা লালবাজার অভিযানের নামে হইচই কিংবা জেলা সদরে বিক্ষোভকে ঘিরে রণক্ষেত্র হলেও ধারাবাহিক ভাবে সে আন্দোলনের কার্যকারিতা থাকছে না। রাজনৈতিক শিবিরের ওই অংশের বক্তব্য, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার ফলেই আরও বেশি করে বিজেপি-র মতো দলের উত্থান ঘটছে। শুধু সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী স্লোগান দিয়ে তাদের রোখা যাচ্ছে না।

বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরের নেতৃত্বেরই অবশ্য দাবি, তাঁরা মোটেও ছুটির মেজাজে নেই! মানুষের জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে তাঁদের পথে নামার কর্মসূচি তৈরি। উৎসবের মাঝখানে পথে নেমে আন্দোলন করলে মানুষ বরং বিরক্ত হন। তাই এই সময়ে প্রতি বছরই সাময়িক বিরতি থাকে বলে তাঁদের যুক্তি। শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্র মিলে সব ধরনের ১৭ দফা দাবিতে ভাইফোঁটার পর দিনই, ২২ অক্টোবর থেকে পদযাত্রায় বেরোচ্ছে বামেদের গণসংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বিপিএমও। উৎপাদন খরচের দেড় গুণ বেশি ফসলের দাম এবং কৃষিঋণ মকুব— এই দু’টি দাবি নিয়ে ২৮ তারিখ থেকে জাঠা হবে বামেদের কৃষক সংগঠনগুলির ‘সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি’র উদ্যোগে। আবার কংগ্রেস শিল্পাঞ্চলে পদযাত্রা শুরু করে দিচ্ছে ১১ অক্টোবর থেকেই।

Advertisement

কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন হচ্ছে, আন্দোলনের ধরন বলতে বাম-কংগ্রেস কি শুধু পদযাত্রা বা জাঠাই বোঝে? তাতে জনমানসে কতটুকু প্রভাব পড়ে? এতগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জনমত গড়ে তোলা বা সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করানোর কোনও চেষ্টা বিরোধীরা করে না কেন?

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, ‘‘আমরা ছুটিতে যাইনি। বছরের প্রতি দিনই কাজে আছি। আন্দোলন মানে তো শুধু মিটিং-মিছিল নয়। পুজোর সময়ে আমাদের কর্মীরা বইয়ের স্টলে জনসংযোগ করেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় সাধ্যমতো ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। এখন যেমন জাঠার প্রস্তুতি চলছে।’’

বিপিএমও-র পদযাত্রা উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে মোট ১,৮৪৪ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করবে। এমন ভাবে পদযাত্রার পরিকল্পনা হচ্ছে, যাতে প্রতিটা জনপদ ও প্রতিটা বুথকে তা স্পর্শ করে যায়। আবার একটা পদযাত্রা অন্যটার সঙ্গে মিশে বড় জাঠা হয়। ওই সময়ের মধ্যে ১১টি বড় পদযাত্রা এবং শতাধিক ছোট-মাঝারি সভা করে ১ ও ৩ নভেম্বর শিলিগুড়ি ও কলকাতায় দু’টি সমাবেশ হবে। আবার কৃষি সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি ২৮ তারিখ ঝাড়গ্রাম ও ২৯শে কলকাতায় সভা করে জাঠা নিয়ে যাবে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড হয়ে বিহারের পটনায়। দেশ জুড়ে ওই কর্মসূচির শেষে দিল্লির যন্তর মন্তরে সমাবেশ হবে। বাম নেতৃত্বের যুক্তি, সরকারি দফতর বা সড়ক পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে কর্মসূচি নিলে বা জঙ্গি বিক্ষোভে গেলে তখন আবার পাল্টা সমালোচনা হবে! পদযাত্রার মতো কর্মসূচিতে বরং এলাকাকে ছুঁয়ে যাওয়া যায়। তার মাঝে মাঝে সভা করে বক্তব্যও জানানো যায়।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘শুধু কার্নিভাল নিয়ে থাকলে তো হবে না! বাংলার সারভাইভাল ভাবতে হবে! সেটা আমাদের মাথায় আছে। বন্ধ কারখানা খোলা ও নতুন শিল্প আনার দাবিতে আমরা পদযাত্রা করছি।’’ অধীরবাবুর নেতৃত্বে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ১১ তারিখ শুরু হবে ওই পদযাত্রা। তার পরে হবে হাওড়া শিল্পাঞ্চল ও জঙ্গলমহলে। অধীরবাবু বলছেন, ‘‘আমরা পাহাড়েও যাব। ওখানে ১৪৪ ধারার জন্য একটু অসুবিধা হচ্ছিল। এ বার আমরা পাহাড়ে যাব, ঠিক করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement