অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
বুধবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের ধারণা ছিল, শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে সীমিত সংখ্যক নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেই ধারণা পাল্টে গিয়েছে। কারণ, বহর বাড়িয়েই শনিবারের ভার্চুয়াল বৈঠক করতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
তৃণমূল সূত্রে প্রথমে জানা গিয়েছিল, অভিষেকের বৈঠকে থাকবেন ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কমিটির ৩৫ জন সদস্য, সমস্ত জেলা সভাপতি এবং সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানেরা। পরে সেই তালিকায় যুক্ত করা হয় কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের। কিন্তু দোলের আগের দিন জানা গেল, তৃণমূলের পুরো রাজ্য কমিটি, সমস্ত বিধায়ক এবং সাংসদকেও ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশিই থাকতে বলা হয়েছে জেলা পরিষদের সভাপতি, পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুরনিগম এলাকার কাউন্সিলরদেরও। উল্লেখ্য, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত স্ক্রুটিনির বিষয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরের মহাসভা থেকে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটিতে প্রথম নাম ছিল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। দ্বিতীয় নাম ছিল অভিষেকের।
বক্সীর পৌরোহিত্যে গত সপ্তাহে তৃণমূল ভবনে প্রথম বৈঠকে বসে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ওই কমিটি। কিন্তু সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না অভিষেক। সে দিনই বৈঠকের শেষ পর্বে বলা হয়েছিল, অভিষেক ১৫ মার্চ (শনিবার) ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। পরে অবশ্য সেই তারিখ দু’বার বদল করা হয়। শেষমেশ ঠিক হয়, নির্ধারিত ১৫ তারিখেই বৈঠক হবে। কিন্তু তৃণমূলে কৌতূহল অন্য কারণে— কেন এত বড় করে পৃথক বৈঠক করতে হচ্ছে অভিষেককে?
প্রত্যাশিত ভাবেই এ প্রসঙ্গে একাধিক ব্যাখ্যা রয়েছে। দলের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, নেত্রী মমতা বড় আকারে বৈঠক করে নির্দিষ্ট বিষয়ে কমিটি গড়ে দিয়েছেন। সেই কমিটি বৈঠক করেছে। তার পরে এই বৈঠক করার অর্থ কি আগের কমিটি পরোক্ষে নাকচ হয়ে যাওয়া? আবার অন্য অংশের বক্তব্য, মমতার অনুমোদন না থাকলে অভিষেক এত বড় আকারে বৈঠক করতেন না। শনির মহাবৈঠক নিয়ে দু’জনের ‘বোঝাপড়া’ না থাকলে মমতা সে বৈঠক বন্ধ করার নির্দেশও দিতে পারতেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তেমন কিছু জানা যায়নি।
আরও একটি ঘটনাকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের ‘সূচক’ হিসাবে দেখতে এবং দেখাতে চাইছেন অনেকে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে তৃণমূল ভবনে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কমিটি বৈঠক করার পরেই ঘোষণা করা হয়েছিল, জেলাভিত্তিক কোর কমিটি স্ক্রুটিনির কাজ তদারকি করবে। সেই কমিটি গঠনও করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুপুরে গড়া কমিটি রাতেই ‘স্থগিত’ হয়ে যায়। শাসকদল সূত্রে জানা যায়, নেত্রী মমতা গোটা বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। যা অনেকের কাছেই ধোঁয়াশা বলে মনে হয়েছিল। বক্সীর মতো প্রবীণ নেতা মমতাকে একেবারে না-জানিয়ে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন, তা যেমন অনেকের মনে হয়নি, তেমনই অনেকে কমিটি গঠন স্থগিত হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে অভিষেকের ‘ভূমিকা’ দেখেছিলেন। যদিও এই কোনও ব্যাখ্যারই আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও সমর্থন মেলেনি। বরং তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতার দুই প্রবীণ নেতা কোর কমিটি নিয়ে মমতার কাছে ‘নালিশ’ করেছিলেন। তার পরেই ওই কমিটি গঠন স্থগিত করে দেওয়া হয়।
তৃণমূলে আপাতত কৌতূহল এবং আলোচনা এই নিয়ে যে, অভিষেক শনিবারের বৈঠকে কী বিষয়ে বলবেন। যদি ভোটার তালিকা নিয়েই বলেন, তার রূপরেখা কী হবে? একাংশের বক্তব্য, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত স্ক্রুটিনির কাজ করতে যতটা সাংগঠনিক শক্তি দরকার, ততটাই দরকার প্রযুক্তিগত ব্যুৎপত্তি। ময়দানে নেমে সমীক্ষারও বিষয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পেশাদার সংস্থা আইপ্যাকের ভূমিকার কথা ইন্ডোরের বৈঠকেই স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘কোঅপারেশন (সহযোগিতা) করে চলতে হবে।’’ তৃণমূলের অনেকের ধারণা, সেই সংক্রান্ত বিষয়েই বিশদে বলতে পারেন অভিষেক। তবে তার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক ভাবে এই বৈঠকের নেপথ্য কারণ নিয়েও আলোচনা রয়েছে শাসকদলের অন্দরে। অনেকের বক্তব্য, ইন্ডোর থেকে কমিটি গঠনের পরে অভিষেক সেখানে ছিলেন ৩৫ জনের এক জন। কিন্তু পৃথক বৈঠক ডাকায় তাঁর ‘ওজন’ প্রমাণিত হয়েছে। বহর বড় করে শনিবারের বৈঠক হলে অভিষেকও আনুষ্ঠানিক ভাবে বহু দিন পরে ডায়মন্ড হারবার এবং সেবাশ্রয়ের গণ্ডি ছেড়ে বেরোবেন। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়, তার জন্য তৃণমূলের অপেক্ষা জারি থাকবে শনিবার পর্যন্ত।