কয়েক পশলা বৃষ্টি, যানজট, বেপরোয়া বাইকের দাপাদাপি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মহাসপ্তমীতে প্রায় রাতভর ঠাকুর দেখার ‘রেকর্ড’ আবারও ধরে রাখল শিলিগুড়ি। ঠাকুর দেখে মাঝরাত কাবার করে বাড়ি ফিরেছেন উত্তরের পাহাড় বাদে ৬ জেলা সদরের দর্শনার্থীরাও।
বিকেল থেকে রাতের মধ্যে নানা এলাকায় খুচখাচ দুর্ঘটনা ঘটেছে। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কোথাও বাইকের ধাক্কায় টোটো থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন প্রৌঢ় দম্পতি। আবার জলপাইগুড়ির গা ঘেঁষে থাকা মণ্ডপে চা বাগান থেকে পুজো দেখতে যাওয়া দুই শিশু দলছুট হয়ে বসে কেঁদেছে। মাইকে নানা ভাষায় তাদের নাম ডাকার পরে বাড়ির লোকজন ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন হারানিধিদের।
সাধারণত মহাসপ্তমীর সকাল একটা তুমুল যানজট দিয়ে শুরু হয় শিলিগুড়িতে। কারণ, ফি বছর এই দিনেই নেপালি সম্প্রদায়ের ‘ফুলপাতি উৎসব’-এর বিশাল মিছিল হয়। উপরন্তু, মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হয় শিলিগুড়িতে। তাতে বেলাবেলি পুজো দেখতে বেরিয়ে পড়া দর্শনার্থীরা বিপাকে পড়েন।
ঘটনা এটাই। কোচবিহার থেকে বালুরঘাট, রায়গঞ্জ থেকে আলিপুরদুয়ার। যে সব বড় মাপের পুজো হয়, সাধারণত অনেক জায়গাতেই সুষ্ঠু পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকে না বলে পুলিশের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তার উপরে ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। যেখানে দরকার নেই সেখানে পুলিশের দেখা মেলে, যেখানে দরকার, সেখানে কেউ নেই।
যেমন, শিলিগুড়ির এয়ারভিউ মোড়ের কথা ধরা যাক। অতীতে শিলিগুড়ির পুজো ছিল হিলকার্ট রোড কেন্দ্রীক। সে জন্য ওই মোড়ে কন্ট্রোল রুম তৈরি করে সেখানে রাস্তার ধারে মঞ্চ বেঁধে যান নিয়ন্ত্রণ হত। গত দেড় দশক ধরে শিলিগুড়ির পুজোর ভিড় মূলত দক্ষিণ মুখী। মানে এনজেপি, শক্তিগড়, মিলনপল্লির দিকেই ঢল নামে মানুষের। কিন্তু পুলিশকে এখনও দেখা যা। এয়ারভিউ মোড়ে রাস্তার কিছুটা দখল করে মঞ্চ বেঁধে নজরদারি করতে।
শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একাধিক পুজো কমিটির সদস্যদের আর্জি, এনজেপি এলাকার দিকে বাড়তি নজরদারির জন্য কন্ট্রোল রুম তৈরি হোক। কারণ, মহাসপ্তমীর রাতে শক্তিগড়, মিলনপল্লি, ভক্তিনগরের বেশ কয়েকটি রাস্তায় যানজটে জেরবার হয়েছেন দর্শনার্থীরা।
রায়গঞ্জ, কোচবিহারেও পর্কিংয়ের সমস্যা পুজোর সময়ে আরও বেশি করে অনুভূত হয়। রায়গঞ্জ শহরের বড়ো পুজো মণ্ডপগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। ফলে, শহরের সুদর্শনপুর থেকে কসবা পর্যন্ত বিভিন্ন পাড়ার বাইপাস রাস্তা দিয়ে যানবাহন ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। কোচবিহারেও ভেনাস স্কোয়ার, তল্লিতলা ইউনিট, পান্থশালা ইউনিট, বিধান সংঘ ছিল ভিড়ে ভিড়াক্কার। মৈত্রী সংঘ, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া, লীলা স্মৃতি ভবানী মন্দির। এসিডিসি ইউনিট, শান্তিকুটীর ক্লাব, বটতলা, শক্তি সংঘেও দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় টোটো, রিকশা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করলেও যানজটে নাকাল হয় শহর। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “বিকেল থেকে মানুষের ঢল নামে। নির্দেশ না মানায় বিভিন্ন রুট থেকে ১০টি টোটো ইতিমধ্যে আটক করা হয়।’’