Sandeshkhali Violence

বাম আমলে সিপিএম, পালাবদলের পর তৃণমূল! কী ভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন সন্দেশখালির শিবু?

স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ শাহজাহানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় শিবুর। জেলিয়াখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য হন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে তাঁর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪০
Share:

শিবু হাজরা। জ্বলছে শিবুর পোলট্রি ফার্ম। —নিজস্ব চিত্র।

গত তিন দিন ধরেই সন্দেশখালির নিখোঁজ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের ‘ঘনিষ্ঠ’ কয়েক জনের বিরুদ্ধে জনরোষ আছড়ে পড়েছিল। শুক্রবার সন্দেশখালির জেলিয়াখালি এলাকায় শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ ওরফে শিবু হাজরার তিনটি পোলট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। শিবুকে গ্রেফতার করার দাবি ওঠে। স্থানীয়দের মুখে শোনা যায় শিবুর ‘অত্যাচারে’র নানা কাহিনিও।

Advertisement

কিন্তু কী ভাবে এতটা ‘প্রভাবশালী’ হয়ে উঠলেন শিবু? কী ভাবেই বা এত বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠলেন? স্থানীয় সূত্রে শিবুর অতীত সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুসারে শিবুর আদি বাড়ি সন্দেশখালির জেলিয়াখালি ব্লকে। শিবুর রাজনৈতিক অতীত বলতে বাম আমলে এলাকায় স্থানীয় সিপিএম কর্মী হিসাবে পরিচিতি ছিল তাঁর। মানে মিটিং-মিছিলে হাঁটা কিংবা সিপিএমের বিভিন্ন সভায় দেখা পাওয়া যেত থাকে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর স্রোতে গা ভাসিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এ বার জোড়াফুলের মিটিং-মিছিলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।

স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ শাহজাহানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় শিবুর। জেলিয়াখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য হন তিনি। পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পরেই রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ে তাঁর। জেলিয়াখালি ছেড়ে সন্দেশখালিতে চলে যান শিবু। সেখানেই বড় বাড়ি তৈরি করে পাকাপাকি ভাবে সেখানে থাকতে শুরু করেন তিনি। ক্রমশ শিবুর রাজনৈতিক কর্মভূমি হয়ে ওঠে সন্দেশখালিই। দলের অন্দরেও ‘নম্বর বাড়ে’ শিবুর। সন্দেশখালি-ব্লকের তৃণমূল সভাপতি হন তিনি।

Advertisement

তার পরেও অবশ্য তাঁর রাজনৈতিক উত্থানপতনের রেখচিত্র ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে। দল শিবুকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তিনি। বিরোধীদের তরফে অভিযোগ তোলা হয় যে, প্রার্থীপদ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয় শিবুর বাহিনী। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, নিজের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে একের পর এক জমি জবরদখল করে সেখানে মাছের ভেড়ি করেন শিবু। তৈরি করেন বাগানবাড়ি, পোলট্রি ফার্ম। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি জমি জবরদখল করে ‘ভেড়ির সাম্রাজ্য’ তৈরি করারও অভিযোগ উঠেছে।

জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ার পর বিবিধ অপরাধমূলক কাজকর্মে শিবু জড়িয়ে পড়তে থাকেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তেমনই একটি হল, সন্দেশখালির তিনটি নদীর ঘাটে নৌকা পারাপারের দায়িত্ব ‘অনৈতিক’ ভাবে নিজের লোকেদের পাইয়ে দেওয়া। এই তিনটি ঘাট হল ন্যাজাট, ধামাখালি এবং জেলিয়াখালি। এই ঘাটগুলিতে নৌকা পারাপারের দায়িত্ব দরপত্র ছাড়াই শিবুর লোকেদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের।

রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে শাহজাহানের নাম জড়ানোর পর থেকেই শিরোনামে উঠে এসেছে সন্দেশখালি। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’। সে দিন ইডি তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। অভিযোগ, শাহজাহান ‘অনুগামী’দের হাতে মার খান ইডি আধিকারিকেরা। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ বা ইডি কেউই খুঁজে পায়নি। যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকাতেই ‘ঘাপটি’ মেরে রয়েছেন শাহজাহান। পুলিশই নাকি তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ হেন শাহজাহানের ‘ডান হাত’ উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরার উপরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। হাওয়া বুঝে ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছেন উত্তম আর শিবুও। শনিবারই উত্তমকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। তবে এখনও পর্যন্ত দলীয় শাস্তির খাঁড়া নেমে আসেনি শিবুর উপরে। শিবু কোথায়, তারও সন্ধান মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement