ঘূর্ণাবর্তও ডাহা ফেল, ফের হোঁচট খেল শীত

ভরা শীতকালেও বাংলার যে এই বিচ্ছিরি শীত-হীন দশা, সেটা কাটাতে পারবে সে। এই আশায় ঘূর্ণাবর্তের দিকে তাকিয়ে ছিল হাওয়া অফিস। কিন্তু বিহারের উপরে থাকা সেই ঘূর্ণাবর্তও শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ করতে পারছে না। অন্তত সোমবার পর্যন্ত তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

ভরা শীতকালেও বাংলার যে এই বিচ্ছিরি শীত-হীন দশা, সেটা কাটাতে পারবে সে। এই আশায় ঘূর্ণাবর্তের দিকে তাকিয়ে ছিল হাওয়া অফিস। কিন্তু বিহারের উপরে থাকা সেই ঘূর্ণাবর্তও শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ করতে পারছে না। অন্তত সোমবার পর্যন্ত তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

Advertisement

ওই ঘূর্ণাবর্ত বিহারের উপরে রয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। এমনিতে সে যে শীতের প্রতি খুব প্রসন্ন, তা নয়। বরং ওই ঘূর্ণাবর্তই ভোরের আকাশ কুয়াশায় ঢেকে দিচ্ছিল। একই ভাবে বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়িয়ে শীতের প্রায় ছুটিই করে দিয়েছিল সে। তবে আবহবিদদের আশা ছিল, ওই ঘূর্ণাবর্তেরই কিছু কর্মকাণ্ডের জেরে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সংগ্রহ করে
নিতে পারে শীত। কেননা স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী বিহারের মালভূমি এলাকা এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি নামানোর কথা ওই ঘূর্ণাবর্তের। আবহবিদেরা ভেবেছিলেন, আজ, মঙ্গলবার নাগাদ বৃষ্টি হলে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। কুয়াশার দাপট কমবে। আর তাতে খুলে যাবে উত্তুরে হাওয়ার পথ।

কিন্তু সেই আশাতেও আপাতত ছাই। সোমবার বিকেলে আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ, বিহারের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে তার প্রভাবে যতটা বৃষ্টি হবে বলে তাঁরা আশা করছিলেন, ততটা বর্ষণের সম্ভাবনা আপাতত নেই। আলিপুর হাওয়া অফিসের এক আবহবিদ জানান, পশ্চিমা়ঞ্চলের জেলাগুলিতে বড়জোর হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। তাতে পারদ কতটা কমবে, সেই বিষয়েও নিশ্চিত নন আবহবিদেরা। ফলে পশ্চিমবঙ্গের শীতভাগ্য এখনও পরিষ্কার নয়। ওই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা সামান্য কমে চলতি সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর।

Advertisement

জানুয়ারির গোড়ায় কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। পারদ তার থেকে ডিগ্রি দুয়েক নীচে থাকলেই কলকাতায় ভাল রকম শীত অনুভূত হয়। আর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে জোরদার শীত মেলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে গেলে। সেই জায়গায় মহানগরে রবি-সোম টানা দু’দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি উপরে। পশ্চিমাঞ্চলেও তেমন পারদ-পতনের আশা দেখা যাচ্ছে না। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, পশ্চিমাঞ্চলের যে-সব এলাকায় মঙ্গলবার হাল্কা বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বড়জোর ১১-১২ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করতে পারে। পশ্চিমের জেলায় এটা কোনও শীতই নয়।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘মঙ্গলবার মূলত পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। খাস কলকাতা বা তার লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তাতে শীত-পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হবে না।’’ অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের বিচারে যে-সময়টা মাঝপৌষ, সেই শীতেও শীত-হীন অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তির আশা নেই।

শীত কি এ বার মিলবেই না?

একেবারে হতাশ করছে না হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, শীতের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঘূর্ণাবর্তের পরোক্ষ সাহায্যের আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু সে প্রায় ফেল করতে বসেছে। এই অবস্থায় শীতের জন্য ওই ঘূর্ণাবর্তের পুরোপুরি দুর্বল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কেননা ঘূর্ণাবর্তটি সামান্য সক্রিয় থাকলেও সকালে কুয়াশা হবে। সারা দিন সূর্য ঢাকা থাকবে হাল্কা মেঘের আস্তরণে। তাতে শীতের বিশেষ সুবিধে হবে না। রাতে শীতের জন্য দিনের বেলা সূর্যের পূর্ণ দাপট চাই। রোদ যত প্রখর হবে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে তত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হতে থাকবে মাটি। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে উত্তুরে হাওয়ার তীব্রতা। এই প্রাকৃতিক অবস্থার জন্যই হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে আছে বঙ্গবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement