তার স্কুলের বাকি বন্ধুরা যখন দুরুদুরু বুকে মাধ্যমিকের ফল জানার চেষ্টা করছে, আমিরুল (নাম পরিবর্তিত) তখন এক ব্যবসায়ীকে ফোনে হুমকি দিয়ে ‘তোলা’ আদায়ে ব্যস্ত!
বুধবার দুপুরে দেগঙ্গা থানার পুলিশ আনাজ ব্যবসায়ী সেজে বাদুড়িয়ার বাগজোলা বাজার এলাকা থেকে ধরে ফেলেছে বছর ষোলোর ছেলেটিকে। পরে জানা গিয়েছে, ৩২০ নম্বর পেয়ে দিব্যি পাশও করেছে সে।
কিন্তু রেজাল্ট নিয়ে ভাবার তার সময় কই! বাড়ি মেরামত করার জন্য টাকার দরকার। টিভিতে অপরাধ-সংক্রান্ত সিরিয়াল দেখে তোলাবাজির ফন্দি আঁটে আমিরুল। বাবা-মা মুম্বইয়ে থাকেন। বাদুড়িয়ায় ঠাকুরমা-দাদুর কাছে থাকে সে। বাদুড়িয়ার ইট ব্যবসায়ী নাজমুল হকের কাছ থেকে কিছু দিন আগে মালপত্র কিনেছিল আমিরুলরা। সেই সূত্রে দোকানের ক্যাশবাক্সে প্রচুর নগদ টাকা দেখে সে। ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর জোগাড় করে ২ মে নাজমুলকে ফোন করে আমিরুল। খুনের হুমকি দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চায়।
পুলিশের ছক মতো ওই ব্যবসায়ী টাকা দেবেন বলে রাজি হয়ে যান। নজর রাখতে থাকে পুলিশ। ধরা পড়ে আমিরুল। তার সঙ্গে ছিল সপ্তম শ্রেণির আর এক ছাত্র।
জেরায় ছেলেটি জানিয়েছে, সিরিয়াল দেখে তার মনে হয়েছিল, ফোনে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় কঠিন কিছু নয়। গল্পের শেষে অপরাধী ধরা পড়ে, এমনও তো দেখায় টিভিতে। দেগঙ্গার ওসি লিটন রক্ষিত জানান, আমিরুল জানায়, সে সব নাকি তার গাঁজাখুরি বলেই মনে হয়েছিল তার!
আঁটঘাট বেঁধেই আমিরুল কাজে নেমেছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কুড়িয়ে পাওয়া সিম কার্ড ব্যবহার করে সে ফোন করত নাজমুলকে। পরে সিম খুলে রেখে দিত। আমিরুলের দাদু জানালেন, কিছু দিন ধরেই নাতির আচরণে বদল চোখে পড়ে। কায়দা করে চুল ছেঁটেছিল। মুখে রুমাল বেঁধে সাইকেল নিয়ে দাপাদাপি করত বলে জানান পড়শিরা।
ধৃত দুই কিশোরকে বৃহস্পতিবার সল্টলেকে জুভেনাইল আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশকে আমিরুল জানায়, সুযোগ পেলে লেখাপড়া করতে চায় সে।