পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। — ফাইল চিত্র।
৫ ফেব্রুয়ারি, আগামী সোমবার রাজ্য বিধানসভায় শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। ১০ তারিখ পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা হতে পারে বাজেট। লোকসভা ভোটের আগে কেমন হতে চলেছে রাজ্য বাজেট, সে দিকে নজর অনেকেরই। তার আগে শুক্রবার বিধানসভায় ছিল সর্বদলীয় বৈঠক এবং কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক। দুই বৈঠকই এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির বিধায়কেরা। এই প্রসঙ্গে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাউসে বিরোধীদের থাকা উচিত। বিরোধী ছাড়া রাজনীতি হয় না। এ ভাবে দু’টি বৈঠক উপেক্ষা করা যুক্তিযুক্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে শুক্রবার দু’টি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
আগামী সোমবার বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন আনা হবে শোক প্রস্তাব। তার পরেই শেষ হয়ে যাবে অধিবেশন। ৬ এবং ৭ ফেব্রুয়ারি হাওড়া পুরসভা নিয়ে সংশোধনী বিল পেশ করা হবে রাজ্য বিধানসভায়। ৮ ফেব্রুয়ারী, আগামী বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ করা হবে। ৯ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি সেই বাজেট নিয়ে চলবে আলোচনা।
শুক্রবার বিধানসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। এই প্রসঙ্গে বিমান বলেন, ‘‘আমি অল ইন্ডিয়া স্পিকার কনফারেন্সে গিয়েছিলাম। অন্য কোনও রাজ্যের স্পিকাররা বলেননি যে, বিরোধীরা এ ভাবে এত দিন বিধানসভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এমন নজির নেই।’’ তিনি এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই বিরোধীরা থাকুন। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, আমি সহমত। হাউসে বিরোধীদের থাকা উচিত। বিরোধী ছাড়া রাজনীতি হয় না। গণতন্ত্র সুরক্ষিত হয় না। বিধানসভার মর্যাদা রাখার দায়িত্ব বিরোধীদেরও।’’ স্পিকার এও জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতার আচরণ সংযত হলে তাঁকে ডেকে পাঠাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি এই দুই বৈঠক এড়িয়ে গিয়ে সঠিক আচরণ করছেন না। তিনি এও জানিয়েছেন, শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করা হলেও তা এখন আর নেই। চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে বিজেপি বিধায়কদের আসার কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা আসেননি। তিনি আবেদন করে বলেন, ‘‘ওদের কাছে আবেদন করি। আজও একই কথা বলব। সবাই সহযোগিতা করবেন।’’ কোনও বিরোধী দলের বিধায়কদেরই তিনি কথা বলতে বাধা দেননি বলেও জানিয়েছেন স্পিকার।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্য বিধানসভার এই বাজেটের উপর নজর বিরোধী-সহ অনেকেরই। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই বাজেটে কিছু চমক থাকতে পারে। প্রতি বছর বাজেট অধিবেশন শুরু হয় রাজ্যপালের বক্তৃতা দিয়ে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে নবান্ন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত থাকলেও রাজ্যপালকে সরকারের ঠিক করে দেওয়া বক্তৃতাই করতে হবে বিধানসভায়। এর পর কয়েক দিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়কেরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। লোকসভা ভোটের বছর বলে এ বার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হবে কি না তা অবশ্য জানানো হয়নি।
লোকসভা ভোট হলে, কেন্দ্রীয় সরকার অন্তর্বর্তী একটি বাজেট পেশ করে। পরে ভোটপর্ব মিটে গেলে নতুন সরকার আবারও পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে থাকে। রাজ্য বাজেটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের উপর। তারাও কেন্দ্রীয় সরকারের ধাঁচে লোকসভা নির্বাচনের বছরে দু’বার বাজেট পেশ করতে পারে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দিনের অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশন বসেছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর আবারও পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছিল মমতার সরকার। এ বার কী হতে চলেছে, সেটাই দেখার।