কলকাতায় অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৮ ঘণ্টার জন্য বঙ্গ সফরে এলেন, প্রায় দেড় বছর আগে থেকেই বাজিয়ে দিলেন বিধানসভা নির্বাচনের দামামা। দলকে দিলেন এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু দলের মধ্যেই প্রশ্ন, বঙ্গ বিজেপির কি আদৌ কোনও প্রাপ্তি হল!
আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তেমন কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি বিজেপি। আর জি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার পরে বিজেপির জন্য একটা রাস্তা খোলার সুযোগ ছিল বলে মনে করে দলের একাংশ। কিন্তু এই সফরে শাহ ওই পরিবারকে সময় দেননি, আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে তেমন কড়া কোনও বক্তব্যও তাঁর মুখে শোনা যায়নি। বরং, পরিবারের সঙ্গে শাহের সাক্ষাৎ না-হওয়ায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে ‘অমানবিক’ বলে পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েছে! অনশন কর্মসূচির পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার চিকিৎসকদের ‘চোকার্স’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সেই মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে দলের একাংশ মনে করছে, ‘চোকার্স’ আসলে বিজেপি! বাংলায় বারবার সুযোগ পেয়ে তারা কাজে লাগাতে ব্যর্থ, এমনকি কার্যত ফাঁকা গোল পেলেও তারা গোল করতে অপারগ!
বিজেপির অন্দরে একাংশের আলোচনায় উঠে আসছে, বিজেপি সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে পিছিয়েই ছিল। শাহের সফর থেকে ফের তেড়েফুঁড়ে নামার যে সুযোগ ছিল, তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সুর ধরে রেখে ফের বলেছেন, “প্রথম দিন থেকেই জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁরা সন্ধি করেছেন, সে দিন থেকে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়। ডাক্তার বোনকে মারার ক্ষেত্রে এক মাত্র যদি কেউ দায়ী থাকেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!”
কিন্তু দলের একাংশের প্রশ্ন, আর জি করের মতো বিষয় হাতে পেয়েও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পেরেছে? দলের এক নেতার বক্তব্য, “মানছি বামেদের দিক থেকে একটা ‘বাধা’ ছিল, কিন্তু সেই বাধা ভেঙে আন্দোলনে ঢোকার মতো রাজনৈতিক শক্তি আমাদের ছিল না? আমাদের দলেও তো চিকিৎসকেরা আছেন, তাঁদের কী ভূমিকা ছিল?” অন্য এক রাজ্য নেতার কথায়, “কলকাতায় ধর্না হল। আন্দোলন তো নিচু তলায় নামানোর কথা ছিল। তা করা গেল না কেন?” অন্য এক নেতার মতে, “নির্যাতিতার পরিবার বলেছে তাঁদের সঙ্গে প্রথম থেকে অগ্নিমিত্রা পাল, সজল ঘোষেরা ছিলেন। তার পরেও আমরা নিজেদের অবস্থানকে শক্ত করতে পারলাম না!”
পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজ়েডসিসি) শাহ তাঁর বার্তায় মাত্র এক বার আর জি কর শব্দটি উচ্চারণ করার এবং বিষয়টিকে সন্দেশখালি-সহ অন্য নারী নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে এক করে দেওয়ায় হতাশ বিজেপির বহু নেতা-কর্মী। এক রাজ্য নেতার আক্ষেপ, ‘‘উনি যা বলে গেলেন, তার একটা কথাও তো নতুন নয়। উনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অনেক রকম বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু সেই ভার কি এতই বেশি যে, আর জি করের ঘটনাকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া গেল না? এই নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো গেল না?”
অস্বস্তির মুখে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ব্যাখ্যা, ‘‘সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠান ছিল (শাহের)। সেটা নিয়ে অন্য কিছু ভাবা ঠিক নয়।’’