ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল ছবি।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তাল দেশের রাজনীতি। সেই আবহেই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শনিবার কলকাতা পুরসভায় আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁকে প্রশ্নে করা হলে জবাবে তিনি নিজের নাতনিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ফিরহাদ বলেন, ‘‘সারা দেশে গড়ে প্রতিদিন ৯০টি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, আরও একজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়ের প্রয়োজন। সারা ভারত জুড়ে এই ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, এটা শ্রীচৈতন্যদেবের ভারতবর্ষ, নেতাজির, ক্ষুদিরামের দেশ। এই ভারতবর্ষ কত মুনি-ঋষির জন্ম দিয়েছে। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আজ অসমে, কাল উত্তরাখণ্ডে, পরশুদিন পঞ্জাবে, রোজ সংবাদপত্র খুললে ধর্ষণের ঘটনা চোখে পড়ে।’’ এর পর তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার নাতনিটা কী ভাবছে? সে ভাবছে, বড় হলে আমারও কী এই অবস্থা হবে? এই সমাজকে পাল্টাতে হবে। এই ঘৃণার সমাজ, অসহিষ্ণুতার সমাজ কেন তৈরি হচ্ছে? আগে তো এমনটা ছিল না! নতুন করে কেন এটা হচ্ছে? এত ঘৃণা কেন? এত অসহিষ্ণুতা কেন? এটা থেকেই হিংস্রতা জন্মাচ্ছে। এই হিংস্রতা থেকেই পাশবিকতার জন্ম হয়। পৈশাচিকতার জন্ম হয়।’’
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। নিজের দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন, ‘‘এমন কঠোর ধর্ষণ-বিরোধী আইন আনতে হবে, যা ঘটনার ৫০ দিনের মধ্যে অপরাধীকে চিহ্নিত করে দোষী সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করবে এবং তাতে দোষীকে কঠোরতম সাজা দেওয়ার নিদান থাকবে।’’ এর পর তিনি দেশে ধর্ষণের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, গত ১০ দিনে দেশে ৯০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি দিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট লেখানো হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ঘণ্টায় চারটি এবং প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিষেক মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে দেশে ধর্ষণ-বিরোধী কঠোর আইন ‘জরুরি’ হয়ে পড়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘‘সমস্ত রাজ্যগুলির সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা। এর থেকে বিন্দুমাত্র কম কিছু হলে, তা হবে নেহাৎই প্রতীকী এবং আদতে তাতে কোনও কাজ হবে না।’’ আর শনিবার সেই তথ্যই তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফিরহাদ।
অভিষেকের এক্স হ্যান্ডলের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার দিনেই এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে যাতে দোষীর বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, সেই বিষয় নিয়েও চিঠিতে সওয়াল করেছেন তিনি। চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, দেশে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজ গড়ে ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা হচ্ছে। এই ধরনের ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল’ ঘটনা বন্ধ করতে অবিলম্বে কড়া আইন আনা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে মত প্রকাশ করেছেন মমতা।