দাবিদাওয়া না-মেটার বারোমাস্যা-সহ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন বাংলার পার্শ্বশিক্ষকেরা। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সেই আবেদন-সহ চিঠি গেল কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থা জানতে চেয়ে রাজ্যের রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০০৪ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় অস্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিক স্তরে এক হাজার এবং উচ্চ প্রাথমিকে দু’হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ করা হয় ওই শিক্ষকদের। তার পরে, ২০১০ সালে তাঁদের অবসরের বয়স ৬০ বছর পর্যন্ত করে রাজ্য সরকার। সেই সময় নিয়ম হয়, তিন বছর অন্তর পাঁচ শতাংশ করে বেতন বাড়ানো হবে। সেই অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি হয়ে চলতি বছরের ১ জুন থেকে প্রাথমিক পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৪৮, উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ৮১৮৬ টাকা। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রায় বন্ধ। ফলে ক্রমশই চাপ বেড়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের উপরে। কিন্তু প্রায় সমতুল্য কাজ করানোর পরেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সঙ্গে তাঁদের প্রাপ্তির বিস্তর পার্থক্য রয়ে গিয়েছে।
পার্শ্বশিক্ষকদের দাবি, তাঁরা যে-বেতন পান, বর্তমান বাজারদরের নিরিখে তা অতি নগণ্য। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষকের সমান দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও রাজ্যের স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষক-পদ শূন্য। শুধু প্রাথমিকেই শূন্য পদ প্রায় ৪০ হাজার। তাঁদের স্থায়ী পদে নিয়োগ করে শিক্ষক-ঘাটতি কমানোর দাবিও তুলেছেন পার্শ্বশিক্ষকেরা। কিন্তু স্থায়ীকরণ হোক বা বেতন বৃদ্ধি— শিক্ষা দফতরের কাছে বারে বারে দরবার করেও সাড়া মেলেনি। তাই গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয় এ রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠন ‘রাজ্য প্যারাটিচার কল্যাণ সমিতি’।
পার্শ্বশিক্ষকেরা রাষ্ট্রপতিকে লেখেন, স্থায়ী শিক্ষকদের মতো তাঁদের নির্দিষ্ট বেতন-কাঠামো নেই। নেই সার্ভিস বুকও। পদোন্নতিরও সুযোগ নেই। ফলে বছরের পর বছর শিক্ষকতা করে গেলেও তার ন্যূনতম স্বীকৃতি মেলে না। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সেই চিঠি যায় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। মন্ত্রক থেকে অগস্টেই রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে যে-চিঠি এসেছে, তা পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’ এর পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ওই কর্তা। সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় থাকা সব প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে দেয়। প্রশ্ন উঠছে, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র কী করবে?
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ওই কর্তা শুধু বলেন, ‘‘রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ রাজ্য প্যারাটিচার কল্যাণ সমিতির তরফে অভিজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘যে-বেতন আমরা পাই, সেটা এক জন শিক্ষকের পক্ষে অসম্মানজনক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করে।’’ কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলন সত্ত্বেও তেমন সাড়া মিলছে না। সরকার জানিয়ে দিয়েছে, পার্শ্বশিক্ষকদের নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও পরিকল্পনা নেই। তা হলে কি আদালতের দ্বারস্থ হবেন আন্দোলনকারী পার্শ্বশিক্ষকেরা?
সেটা কার্যত সম্ভব নয় বলেই জানান পার্শ্বশিক্ষক সমন্বয় সমিতির সদস্য রোমিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী স্থায়ী শিক্ষকের সমমর্যাদা পেতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর আর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমাদের অনেকেরই তা নেই। সেই শর্ত পূরণ করতে পারলে তবেই আদালতে যাওয়া সম্ভব।’’