রাজ্যে বাড়তে পারে শিক্ষকদের অবসরের মেয়াদ

সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমস্যা মেটাতে চিকিৎসকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর চিন্তা সম্প্রতি শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ বার একই রকম ভাবনা শুরু হয়েছে শিক্ষকদের অবসর নিয়েও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমস্যা মেটাতে চিকিৎসকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর চিন্তা সম্প্রতি শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ বার একই রকম ভাবনা শুরু হয়েছে শিক্ষকদের অবসর নিয়েও।

Advertisement

চিকিৎসক ও শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর পরিকল্পনা, চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬৮ এবং শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৭০ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ডাক্তার, প্রশাসনিক পদ— এ সব ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতাও বাড়ে। তাই অবসরের বয়স বাড়িয়ে দিলে রোগী বা ছাত্রছাত্রীরা উপকৃতই হবেন। সরকারেরও নিয়োগ নিয়ে সমস্যা কমবে।

অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়ে সরকারি স্তরে বা শিক্ষা দফতরে অবশ্য এখনও তেমন কোনও আলোচনা শুরু হয়নি। কিছু দিন আগেই বিধানসভায় বিল পাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও শিক্ষা পর্ষদের প্রশাসনিক প্রধানদের অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষকদের কর্মজীবনের মেয়াদ বাড়াতে গেলেও বিল আনতে হবে বিধানসভায়। তবে বিষয়টি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনার স্তরেই আছে। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও কালীপুজো হয়েছে। পুজোর পরের দিন, রবিবার বাড়িতে দধি-কর্মা বিতরণের অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং সহ-সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাস, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেক অতিথিই উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আপ্যায়নের ফাঁকে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করেছেন, সরকারি চিকিৎসকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের অবসরের বয়সও তিনি বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।

Advertisement

রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক শিবির এবং অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই চিন্তার সঙ্গে সহমত পোষণ করছে না। তাদের বক্তব্য, কর্মরতদের অবসরের বয়স বাড়ালে নতুন কর্মপ্রার্থীদের নিয়োগের কোনও জায়গা থাকবে না। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের চিত্র করুণ। ফলে, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগও গত কয়েক বছরে বেশ অনিয়মিত। টেট নিয়ে জটিলতা এবং আদালতে মামলা চলায় নিয়োগ আটকে ছিল। হাইকোর্টের রায়ে শেষ পর্যন্ত নিয়োগের পথ খুললেও তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, আদালতের রায়ের এক মাসের মধ্যে সফল-তালিকার সকলকে নিয়োগ পত্র দেওয়া হবে। সেই আশ্বাস পূরণের কী হল, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।

এই সূত্রেই তাদের এবং নানা শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, যে সব ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকারদের চাকরির সুযোগ অন্তত খাতায়-কলমে হলেও আছে, সেখানে অবসরের বয়স বাড়িয়ে দিলে বেকার সমস্যা ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে যাবে। এতে সমাজে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়বে এবং উপায়ান্তর না থাকায় সাধারণ ভাবে অপরাধের প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে। বস্তুত, এই উপলব্ধি থেকেই পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স কমিয়ে ৬০ করেছিল। শিক্ষা দফতর সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, গোটা বিষয়টিই ভেবে দেখা হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে।

এর পাশাপাশি, দুর্ঘটনা কমাতে যান-শাসনের ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়ার বার্তাও এ দিন ঘনিষ্ঠ মহলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক মাস আগেই তাঁর নির্দেশে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নাম দিয়ে পথ নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার কর্মসূচি শুরু করেছে পুলিশ। এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশের পদযাত্রাও হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ভাইপো তথা দলীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনা মমতার উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যে কারণে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত পুলিশ উৎসবে ব্যস্ত থাকে। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোর পরে যান-শাসন নিয়ে পুলিশকে ফের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর বক্তব্য, অভিষেকের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হল— গাড়িতে বসা যাত্রীদের সিট বেল্ট অবশ্যই বাঁধা উচিত। সেটা বাধ্যতামূলক করার জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement