ভাগ্য ফিরেছে রাজ্য লটারির! পাঁচ বছরে লাভ বেড়েছে তিন গুণের বেশি।
নবান্নের তথ্য বলছে— বামেদের শেষ বছর ২০১০-’১১ সালে অর্থ দফতরের অধীন এই শাখা লাভ করেছিল ৮ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে লাভের অঙ্ক ৩০ কোটি ছাড়িয়েছে। সঙ্গে ব্যয়সঙ্কোচ। দুয়ে মিলে এখন সুদিন রাজ্য লটারির। অর্থ দফতরের হিসেব অনুযায়ী প্রায় তিন লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই পেশায় যুক্ত। রামরাজাতলার সুবোধ দলুই এঁদেরই এক জন। মাঝে অনলাইন লটারির চাপে রাজ্য লটারির টিকিট বিক্রি ছেড়ে সব্জি বিক্রি শুরু করেছিলেন। এখন আবার ফিরেছেন পুরনো পেশায়। কেন? সুবোধের কথায়, ‘‘টিকিট বিক্রি বেড়েছে। পুরস্কারের টাকা পেতে আর ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে না। তার ফলে ব্যবসা ভালই চলছে।’’
অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘লটারির টিকিট বিক্রি করে লাভ হয়তো আরও বাড়ানো যায়। কিন্তু তাতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। সরকার চায় না, লটারির টিকিট কাটতে কাটতে কেউ সর্বস্বান্ত হয়ে যাক। তাই লাভ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও রাশ টানতে হয়।’’
কার্যত সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতেই ২০১৩-এ রাজ্যে অনলাইন লটারি নিষিদ্ধ করার পরেও সাধারণ লটারি খেলা বাড়ায়নি সরকার। আগেও যেমন বছরে ৫৪টি খেলা হতো, এখনও ততগুলিই হয়। এর মধ্যে ছ’টি বাম্পার ড্র, দুর্গাপুজো, দীপাবলি, নববর্ষ ও রথযাত্রার মতো পালাপার্বণে খেলা হয়। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘অনলাইন লটারিতে প্রতি ঘণ্টায় খেলা হত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় টিকিট কাটার সুযোগ থাকত। সেই ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ ঘটিবাটি বেচে দিয়েছিলেন।’’
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার অনলাইন লটারি নিষিদ্ধ করার পরে আয়োজকদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সর্ব্বোচ্চ আদালতে জয় হয় রাজ্যের। আর এর জেরেই ফের সাধারণ লটারির টিকিট বিক্রি হু-হু করে বাড়ে। পাশাপাশি খরচও কমিয়েছে লটারি ডাইরেক্টরেট। সেখানকার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছে তারা। লাভ বৃদ্ধিতে যোগদান রয়েছে এই পদক্ষেপেরও। যদিও কর্মীর অভাবে ভুগছে অর্থ দফতরের এই শাখা। ৮১ জনের জায়গায় এখন রয়েছেন মাত্র ৩৩ জন।
কী করে রাজ্য লটারিকে আরও জনপ্রিয় করা যায়, তা জানতে সম্প্রতি সমীক্ষা করেছিল লটারি ডাইরেক্টরেট। অনেক টিকিট বিক্রেতার মত, পুরস্কারের সংখ্যা কমিয়ে টাকার পরিমাণ বাড়ালে ব্যবসা ভাল চলবে। কেউ মনে করেন, পুরস্কার পাওয়ার পরে টাকা পেতে অনেক সময় দেরি হয়। এতে তাঁদের ব্যবসা মার খায়। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরস্কারের টাকা যাতে ঠিক সময়ে মেলে, তার জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে পদ্ধতি সরল করার চেষ্টা হয়েছে। পাশাপাশি, খেলার নিয়মকানুনেও কিছুটা অদলবদল করা হয়েছে। ফলে গত দু’বছরে অধিকাংশ খেলায় ৯০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। লাভও বেড়েছে।’’