প্রতীকী ছবি।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আতঙ্কের আবহে ভোটার তালিকায় সংযোজন, সংশোধন ও বিয়োজন নিয়ে আমজনতা বাড়তি সচেতন ও সতর্ক। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আবেদনও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করতে ত্রিমুখী ফর্মুলা বা সূত্র নিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর।
কী সেই ত্রিমুখী সূত্র?
প্রথমত, তালিকা সংশোধনের কাজ করাতে গিয়ে কোনও ভোটারের কিছুতে ভুল চোখে পড়লে তা সংশোধনের দায় কার্যত ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। সে-ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে সংশোধন সংক্রান্ত (আট নম্বর ফর্ম) আবেদনপত্র পাঠিয়ে তা ঠিক করিয়ে নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। এর আগে যে-কোনও সরকারি নথি ঠিক করার কাজে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর উপরেই সবটা ‘চাপিয়ে’ দেওয়ার প্রবণতা দেখেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এ বার ভোটার তালিকা নির্ভুল করতে ব্যতিক্রমী পথে হাঁটলেন রাজ্যের সিইও এবং অন্য কর্তারা। তাঁদের নির্দেশেই জেলা প্রশাসন প্রয়োজনে বাড়িতে সংশোধনীর ফর্ম পাঠাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে সংশোধন, সংযোজন মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার থেকে এক লক্ষ বা তার বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে এত বেশি আবেদনপত্র এর আগে কখনও আসেনি। সেই কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য কর্মীর অভাব আছে। কিন্তু তার জন্য হাত গুটিয়ে থাকলে যে চলবে না, সেটা জেলা প্রশাসনকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন সিইও-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। সেই সব আবেদনের নিষ্পত্তি করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য কত কর্মী, কত কম্পিউটার বা অন্য পরিকাঠামো প্রয়োজন, তার সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে দিতে বলা হয়েছে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও)-কে। সেই অনুযায়ী ইআরও-কে পরিকাঠামো দিয়ে সাহায্য করার কথা জেলা প্রশাসনের।
তৃতীয়ত, ভোটার তালিকা তৈরির কাজে সামান্য গাফিলতি হলেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী বা আধিকারিকদের।
এই ত্রিমুখী সূত্রেই নিখুঁত তালিকা তৈরির পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে একাধিক বার তালিকার কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মী-আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন সিইও এবং তাঁর দফতরের পদস্থ কর্তারা। উত্তরবঙ্গের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলন করেছেন তাঁরা। চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারেন ওই দফতরের কর্তারা। নানা ধরনের পদক্ষেপের পরে কি নিখুঁত হবে তালিকা?
‘‘চেষ্টা করলে সাফল্য মেলে। আমরাও চেষ্টা করছি। বাকিটা সময় বলবে,’’ বলেন এক কমিশন-কর্তা।