সব রাজ্যেই চালু আছে কেন্দ্রের ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’। পশ্চিমবঙ্গেও আছে। তবে আর থাকছে না। কারণ, বাংলা অচিরেই তার নাম পাল্টে করে দিচ্ছে ‘রাজ্য গ্রাম সড়ক যোজনা’।
কারণ?
ওই প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে দিল্লি। তাই তার নামটাই বদলে দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
কেন্দ্রের ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ গোটা দেশে চালু রয়েছে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে। মূলত, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্যই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। দেশজোড়া এমন প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে। তবে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘নতুন নামটি মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।’’
এ ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলের সিদ্ধান্ত কেন নিল নবান্ন?
এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারকে টাকা দিতে হবে। তাই এর নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে, ব্যাখ্যা সুব্রতবাবুর।
২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ বা পিএমজিএসওয়াই প্রকল্প চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। অন্তত পাঁচশো বা তার বেশি জনসংখ্যার সব জনপদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। আর পাহাড়, মরুভূমি বা আদিবাসী এলাকায় এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ন্যূনতম জনসংখ্যা চাই ২৫০।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের ১০০ শতাংশ আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। শর্ত ছিল, রাস্তা তৈরি হলে তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকার। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, শুরুতে পুরো টাকা দিলেও ধাপে ধাপে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেয় কেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর সরকার জানিয়ে দেয়, গ্রামের রাস্তা তৈরির এই প্রকল্পে কেন্দ্র দেবে ৬০ শতাংশ অর্থ। বাকি ৪০ শতাংশ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। দিল্লির এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল সরকার এর পরেই রাজ্যে প্রকল্পের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেয়।
সুব্রতবাবুর বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের সহায়তায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় ওই দৈর্ঘ্যের রাস্তা তৈরি করতে গেলে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে রাজ্যকে। ৪০ শতাংশের হিসেবে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তার জন্য শুধু রাজ্যকেই দিতে হবে চার হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির পুরো খরচ। ‘‘কেন্দ্র আমাদের দয়া করছে না। আমাদেরই টাকা ফেরত দিচ্ছে কেন্দ্র। আমি এই নিয়ে অনেক বার চিঠি দিয়েও কোনও উত্তর পাইনি,’’ সুব্রতবাবুর গলায় ক্ষোভ।
প্রকল্পের নাম বদলের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়ন তো এদের (তৃণমূল সরকারের) লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য ভোট! এই সরকার পুরোপুরি কেন্দ্রের অনুদানভোগী। নিজেদের আয় বাড়ানোর যোগ্যতা নেই। এরা কেন্দ্রের অনুদান নেবে, আবার তাদের প্রকল্পের নামও পাল্টে দেবে!’’ শমীকবাবুর কটাক্ষ, রাজ্য এই প্রকল্পের নাম ‘মমতাশ্রী’ রাখলেও কেন্দ্রের কিছু যাবে-আসবে না!
তবে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম যে এই প্রথম বদল হচ্ছে, তা নয়। তৃণমূল সরকারের প্রথম দিকে কেন্দ্রের ‘ওয়াটার শেড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘জল ধরো, জল ভরো প্রকল্প’। একই ভাবে কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন বা আজীবিকা’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘আনন্দধারা’। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সারা দেশে ‘খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ নামে দু’টি প্রকল্প চালু করেছেন। নবান্ন তাদের নাম বদল করে রেখেছে যথাক্রমে ‘খাদ্যসাথী’ এবং ‘নির্মল বাংলা’।