ফাইল চিত্র
সরকারি কাজে দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর তদন্ত করতে পারবে না লোকায়ুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের আওতার বাইরে আনার লক্ষ্যে আইন সংশোধন করতে চলেছে তৃণমূলের সরকার। যে উদ্যোগ নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসক পক্ষ আইন বদলে ফেললেও প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে তারা।
বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনেই পেশ হতে চলেছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকায়ুক্তা (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮’। প্রস্তাবিত বিলে পুরনো আইনের ৮এ ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি কাজে দুর্নীতির অভিযোগে লোকায়ুক্তের কাঠগড়ায় তোলা যাবে না। আর মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে লোকায়ুক্ত তার তদন্ত করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে ‘সরকারি সম্মতি’র উপরে। বর্তমান কাঠামোয় কিছু রদবদল এনে নতুন বিলে বলা হচ্ছে— স্পিকার এবং বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যপালের কাছে লোকায়ুক্তের নাম সুপারিশ করেন, সেই প্রক্রিয়ায় পরিষদীয় মন্ত্রীর মতও নিতে হবে। তুলে দেওয়া হচ্ছে উপ-লোকায়ুক্ত পদ। এখন অবশ্য এ রাজ্যে লোকায়ুক্তের পদই ফাঁকা।
দেশের সব রাজ্যেই যে লোকায়ুক্তের আওতায় মুখ্যমন্ত্রী আছেন, এমন নয়। কেন্দ্রীয় আইনের বলে প্রধানমন্ত্রী লোকপালের আওতায় (বহির্দেশীয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-সহ কিছু ক্ষেত্র বাদ দিয়ে) আসার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীদেরও লোকায়ুক্তের অধীনে আনার জন্য চাপ বেড়েছে। একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে গত মার্চ মাসেই সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা-সহ ১২টি রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা কত দিনের মধ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করবে? এমন পরিস্থিতিতে আইন সংশোধন করে মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগকে ‘উল্টো যাত্রা’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে। কয়েক বছর আগে বিহারে নীতীশ কুমার তাঁর রাজ্যের আইন সংশোধন করে মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের অধীনে নিয়ে এসেছিলেন। আবার কর্নাটকে লোকায়ুক্তের রায়েই দুর্নীতির মামলায় জেল হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার।
এ বারের বিল দেখে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল দুর্নীতির প্রশ্নে ভয় পেয়েছে। এমন বিল পাশ হলেও প্রয়োজনে আমরা আদালতে যাব।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অণ্ণা হজারের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর সরকারই একুশে আইন আনছে! মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না! আর সরকারে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অপছন্দের লোক, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে!’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যা বলার, বিধানসভাতেই বলবেন।
জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গ— এই ১২ রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে গত মার্চে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, কেন তারা লোকাযুক্ত নিয়োগ করেনি। জনস্বার্থের একটি মামলার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত আরও জানতে চায়, কত দিনের মধ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগ হবে?
কেন্দ্রে ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র বাদে প্রধানমন্ত্রী লোকপালের আওতায় পড়েন। কিন্তু লোকায়ুক্ত নিয়োগ ছেড়ে রাখা আছে রাজ্য সরকারের হাতে। উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী লোকায়ুক্তের আওতায় নেই। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান আইনে লোকায়ুক্তের অধীনে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ২০১১-১২ সালে প্রস্তাব এসেছিল, মুখ্যমন্ত্রীদের লোকায়ুক্তের আওতায় আনা আবশ্যিক হোক। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আঘাতের প্রশ্ন তুলে সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তৃণমূল এবং এডিএমকে।