প্রশাসনিক সংস্কারের প্রথম ধাপে রাজ্যে আরও দু’টি বিভাগ (ডিভিশন) তৈরির সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান, জলপাইগুড়ির পাশাপাশি মেদিনীপুর এবং মালদহে আরও দু’টি বিভাগ গঠন করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কাজকর্মে আরও গতি আনতে এবং নজরদারি বাড়াতে অতিরিক্ত দু’টি বিভাগ তৈরি করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য এ দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
নতুন কাঠামোয় প্রেসিডেন্সি বিভাগে থাকবে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া। বর্ধমান বিভাগের অধীনে বর্ধমান, হুগলি এবং বীরভূম, জলপাইগুড়ি বিভাগে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও দার্জিলিং জেলা। নবগঠিত মেদিনীপুর বিভাগের অধীনে আনা হচ্ছে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলাকে। মালদহ বিভাগের অধীনে থাকবে মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দুই দিনাজপুর। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন প্রধান সচিব পদমর্যাদার এক জন অফিসার।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ৬০টি দফতর অদলবদল করে অন্তত ১০টি দফতরকে ছেঁটে ফেলতে চেয়েছেন। ফলে বেশ কয়েকটি দফতর একসঙ্গে জুড়ে যাবে। সেই কাজও প্রায় সম্পূর্ণ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নোট বাতিলের প্রতিবাদ-কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আপাতত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। দিল্লি-সহ দেশের নানা প্রান্তে সভা সেরে তিনি ফিরলে নতুন চেহারার দফতরের তালিকা মন্ত্রিসভায় পেশ হতে পারে। তার আগে রাজ্যে আরও দু’টি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত এ দিন নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রশাসনিক কাজে গতি আনার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আমলা শিবিরে। সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, ব্রিটিশ আমলে বিভাগের কমিশনারেরা প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁরাই কার্যত এক-একটি বিভাগের অধীন জেলাগুলিতে নজরদারি চালাতেন। কিন্তু স্বাধীন ভারতে বিভাগীয় কমিশনারদের ক্ষমতা কমতে থাকে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে কমিশনারদের ভূমিকা কার্যত কাগজে-কলমেই। মূলত শাসক দলের অপছন্দের অফিসারদের বদলির জন্যই এই পদগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা অনুযায়ী ৬০টি থেকে সরকারি দফতর ৫০-এ দাঁড়ালে প্রায় সব প্রধান সচিবকেই কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ দফতরে বসাতে হবে। এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘নতুন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে অপছন্দের কোনও অফিসারকেও দফতরের প্রধান সচিব করে রাখতে হবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কম গুরুত্বের বিভাগীয় কমিশনার পদে পাঠানো যায়, তার জন্যই বিভাগের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।’’
তবে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রশাসনের কাজে গতি আনাই বিভাগের সংখ্যা বাড়ানোর এক মাত্র উদ্দেশ্য।’’