একশো দিনের কাজের টাকা এখনও বন্ধ। প্রতীকী ছবি।
প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার বরাদ্দ এলেও একশো দিনের কাজের টাকা এখনও বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অনুমোদন মিললেও, তার বরাদ্দ এখনও আটকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ঘুরে যাওয়া কেন্দ্রীয় দলের (গত বছরের প্রথম দিকে যে দল এসেছিল এবং কেন্দ্রকে মে মাসে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল) রিপোর্ট রাজ্যকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
প্রশাসনের খবর, ওই রিপোর্টের নিরিখে মন্ত্রক সুপারিশ করেছে, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পে সাংসদদের যুক্ত করতে হবে এবং রিপোর্টে উল্লিখিত খামতির ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। যদিও কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টে তিনটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প—প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) এবং ১০০ দিনের কাজের পর্যালোচনার সারাংশে বিশাল কিছু বেনিয়মের উল্লেখ নেই বলেই সূত্রের খবর।
কেন্দ্রের লিখিত বার্তায় মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির কাজের অবস্থা সিএজি (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল) এবং সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে দিয়ে অডিট করানোর দাবি আগেই তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদেরা। ঘটনাচক্রে, গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পাটিলও বলে গিয়েছেন, “এখানে সমস্ত সমীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই আমাদের মন্ত্রী টাকা দেবেন।” তবে রাজ্যের পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় দলের সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট কার্যত ‘নির্বিষ’। তবু জোর করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে তার ব্যবহার হচ্ছে। বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে গরিব উপভোক্তাদের। পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, “সরকারি স্তরে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সব রাজ্যেই কি এ সব বিধি মানা হচ্ছে, নাকি শুধু এ রাজ্যের জন্য? এ সবের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য উপভোক্তাদের এ বার বোঝাতে হবে।”
২০২১ সালের অগস্ট মাসে বিজেপির ২০ জন সাংসদ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, এ রাজ্যে ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়রদের যোগসাজশে টাকা নয়ছয় করেছেন রাজ্যের শাসক-নেতারা এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজকর্মে বিজেপি সাংসদদের যুক্ত করা হয়নি। সেই অভিযোগকে ‘খুবই গুরুতর’ আখ্যা দিয়ে বিষয়টি হাতে নিয়েছিল জাতীয় গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন সংস্থা (এনআরআইডিএ)। তার ভিত্তিতেই গত বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে ঘুরে গিয়ে মে মাসে রিপোর্ট দেয় কেন্দ্রকে। সেই রিপোর্টই রাজ্যকে পাঠিয়ে ‘খামতি’ মেটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রের চিঠির জবাবে রাজ্য জানিয়েছে, প্রায় সব সুপারিশ মেনে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে আটকে থাকা টাকা দ্রুত ছাড়া হোক। পাশাপাশি, রাজ্যের পাল্টা দাবি, কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্ট লাগামছাড়া দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ করে না। কিছু জায়গায় অভিযোগের সত্যতা মিললেও, সেগুলি সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। গত বছর কেন্দ্রের সব সুপারিশ মেনে হয়েছে নিবিড় সংশোধনের কাজ। এখন শুরু হয়েছে আবাস (প্লাস) প্রকল্পের নতুন সমীক্ষা। আর ২০২১ সালের শেষ থেকে এখনও পর্যন্ত ১৪ লক্ষের বেশি নাম আবাস (প্লাস) প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সংশোধন প্রক্রিয়ায়। প্রদীপ বলেন, “ওদের (কেন্দ্র) আর কিছু বলার নেই। ওদের মনোভাব, কী ভাবে গরিব মানুষকে বঞ্চিত করা যায়। তবু আমরা নথি পাঠাব কেন্দ্রকে।” রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মানুষ ভয়মুক্ত। একটা পঞ্চায়েতও অভিযোগমুক্ত নয়। কেন্দ্রীয় দলকে এখন নিজেদের মর্জিমতো ঘোরাতে পারবে না প্রশাসন।”